প্রকাশিত,১৩,ফেব্রুয়ারি
এম ফয়জুল ইসলাম ফয়সাল, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগরে ফসলি জমি রক্ষায় বারবার অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় অবৈধ ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে ভূমি দস্যু ইউনুছ ভূঁইয়া। তিন বছর ধরে কাজিয়াতল গ্রামে অবৈধভাবে মাটি কেটে কৃষিজমিকে বিরানভূমিতে পরিণত করলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় প্রশাসনকে। বরং স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিয়মিত সুবিধা গ্রহণ করে অভিযানের আগেই অভিযুক্তকে সতর্ক করে দেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও তা কেবল আইওয়াশের মতো। অভিযান চালিয়ে দুই-চারটি পাইপ ভেঙে দেওয়ার পর আবারও আগের মতো ড্রেজিং শুরু হয়। ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মোস্তাফিজ ও অফিস সহকারী সুরুজ মিয়ার ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, তারা ভূমি দস্যুদের কাছ থেকে নিয়মিত সুবিধা নিয়ে থাকেন এবং অভিযান শুরুর আগেই তাদের সতর্ক করেন। ফলে কার্যকর কোনো শাস্তি বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
স্থানীয়রা জানান, ইউনুছ ভূঁইয়া প্রথমে মাছ ও ফলের প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করলেও, এখন তিনি জোরপূর্বক কৃষিজমি দখল ও নামমাত্র মূল্যে জমি কেনার কৌশলে লিপ্ত। যারা জমি বিক্রি করতে চান না, তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়, এমনকি মিথ্যা মামলার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
বিগত সময়ে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় এই অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কৃষিজমি ধ্বংসের ফলে স্থানীয় কৃষকদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইউনুছ ভূঁইয়ার ফলের প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে তার বৈধ-অবৈধ কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুর রহমান বলেন, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধ ড্রেজার ধ্বংস করছি৷ অভিযোগ পেলে তৎক্ষনাৎ ড্রেজার বন্ধের অভিযান পরিচালনা করছি।
তবে স্থানীয়দের দাবি, অভিযোগ জানানোর পরও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, বরং দায়সারা বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে, দ্রুত এই অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে ফসলি জমি ধ্বংস হয়ে কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
প্রশাসন কি এবার ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে, নাকি আগের মতোই মাটিচাপা পড়ে যাবে সাধারণ মানুষের আকুতি সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে ভুক্তভোগী সকল কৃষক ও গ্রামবাসী।
কুমিল্লা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিরুল কায়ছার মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ প্রাপ্তির সাপেক্ষে তদন্ত করে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অবৈধ ড্রেজিং ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ সোচ্চার।
আপনার মতামত লিখুন :