গ্রামীণ সমাজে পুনর্বাসনের বার্তা নিয়ে কুলাউড়ায় অকুপেশনাল থেরাপি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ।


দেশ সময় প্রকাশের সময় : ২০২৫-১০-২২, ৮:৫৩ অপরাহ্ন /
গ্রামীণ সমাজে পুনর্বাসনের বার্তা নিয়ে কুলাউড়ায় অকুপেশনাল থেরাপি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ।
print news || Dailydeshsomoy

প্রকাশিত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালাতে এগিয়ে এসেছে একদল তরুণ। দেশের অন্যতম পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)-এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)–এর অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি সেখানে চালিয়েছে এক মাসব্যাপী সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন কার্যক্রম।

গত ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ পুনর্বাসন প্লেসমেন্টে বিভাগের দুইজন শিক্ষক তত্ত্বাবধানে অংশ নেয় ২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের লক্ষ্য ছিল—প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা ও সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে (গোবিন্দপুর, হরিনগর, নবীনগর, কোনাগাঁও, দক্ষিণপাড়া, সিরাজনগর চা বাগান, নাসিরাবাদ, শেরপুর, লামাপাড়া, দাউদপুর, শ্রীপুর, চক) জরিপ চালিয়ে শনাক্ত করেন মোট ১৬৩ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশ শারীরিক, ২৭ শতাংশ স্নায়বিক, ৬ শতাংশ মানসিক এবং ১১ শতাংশ শিশু বিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতায় ভুগছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী পাওয়া যায় লামাপাড়া গ্রামে (২৬ জন), আর সবচেয়ে কম দক্ষিণপাড়া ও কোনাগাঁও এলাকায় (৫ জন করে)।

চিকিৎসা কার্যক্রমে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ৩০ জন রোগীকে মোট ১৯০টি অকুপেশনাল থেরাপি সেশন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা থেরাপিস্টদের নির্দেশনায় স্থানীয় সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করেন বিভিন্ন সহায়ক সামগ্রী—যেমন বাঁশের হ্যান্ডরেইল, হুইলচেয়ার র‍্যাম্প, বিশেষ চেয়ার, এবং দৈনন্দিন কাজে সহায়ক মডিফাইড ব্রাশ, চামচ ও কলম।

এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে অনেক রোগী এখন নিজে নিজে হাঁটতে, খেতে, পোশাক পরতে ও দাঁত ব্রাশ করতে পারছেন। এতে তাদের জীবনে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৬টি উঠান বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে প্রায় ২০০ জন স্থানীয় মানুষ প্রতিবন্ধিতা, প্রাথমিক পরিচর্যা ও পুনর্বাসন সম্পর্কে সচেতনতা লাভ করেন।

অকুপেশনাল থেরাপির শিক্ষার্থীরা বলেন, “শুধু থেরাপি দেওয়া নয়, আমরা চেয়েছি মানুষ যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তাদের পাশে দাঁড়ায়।”

কুলাউড়া প্রতিবন্ধী পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজ আহমেদ জানান, “ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধীতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ভাতা পেলেও কর্মসংস্থান ও ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের অভাবে স্বনির্ভর হতে পারছেন না।”

শিক্ষার্থীদের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে পুনর্বাসন সেবা কেন্দ্র স্থাপন, স্থানীয় রিহ্যাব বোর্ড ও তহবিল গঠন এবং ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি। নিয়মিত উঠান বৈঠক ও সচেতনতা কর্মসূচিও চলমান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২৭ অক্টোবর পালিত হবে অকুপেশনাল থেরাপি দিবস।
এবারের প্রতিপাদ্য— “অকুপেশনাল থেরাপি কেবল চিকিৎসার মাধ্যম নয়, এটি স্বনির্ভরতা, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক অংশগ্রহণের পথ।”

কুলাউড়ার এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে, সীমিত সম্পদ, স্থানীয় উপকরণ ও আন্তরিক মনোভাব একত্রিত হলে প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনেও বদল সম্ভব।