

প্রকাশিত
সঞ্জিব দাস, গলাচিপা, পটুয়াখালী, প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালিকাপুর ও পানপট্টি ইউনিয়নের সংযোগ খালের ওপর নির্মিত বারো কানিয়া বাড়ি সেতুটি এখন মানুষের জন্য আতঙ্কের নাম। বিকল্প পথ না থাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ও যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন সেতুটি দিয়ে। এ ছাড়া স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষকের উৎপাদিত ফসল, মালামাল পরিবহন ও জরুরি মুহুর্তে রোগীবাহী এম্বুলেন্স পারাপারে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে দিন পার করছে স্থানীয়রা। তবে এলজিডি বলছে, সেতু নির্মাণে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পাস হলেই কাজ শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে এলজিইডির বাস্তবায়নে নির্মিত প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ এই কংক্রিট ও লোহার সেতুটি এখন ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। সেতুটি দিয়ে উপজেলা শহরের সাথে পানপট্টি ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষের দ্রুত ও সহজ যোগাযোগ। এই সেতু দিয়েই পানপট্টি লঞ্চঘাট, পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর সাথে যাতায়াত পথ। দুই পারে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও হাটবাজার। ফলে প্রতিনিয়ত মানুষের যাতায়াতে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর রেলিংয়ের কিছু অংশ ভেঙে গেছে, কোথাও বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ফেটে যাওয়া ঢালাই থেকে বেরিয়ে এসেছে লোহার রড, তাতে মরিচা ধরেছে। ফলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানো হলেও বিকল্প কোনো পথ না থাকায় যানবাহন ও মানুষ বাধ্য হয়েই প্রতিদিন জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। সেতুর ওপর কাঠ বিছিয়ে স্থানীয়রা চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে সেতুর উপর। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কার ও নতুন সেতু নির্মাণ না হলে বিচ্ছিন্ন হতে দুই পারের যোগাযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা মো. বশির বলেন, ‘প্রায় দুইবছর ধরে সেতুটি ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা কাঠ বিছিয়ে দিয়েছি মানুষ ও ছোটখাটো যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান একমাত্র সেতুটি নতুন করে নির্মাণ। আমরা অনুরোধ করি- দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ করা হোক।’ গাড়িচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেতু পার হতে গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিতে হয়, আবার মালামাল পরিবহনেও সমস্যা হয়। প্রতিদিন ভয় নিয়ে পার হতে হয় সেতুটি। আর ভাঙা জায়গায় কাঠ বিছানো থাকলেও গাড়ি উঠলেই সেতুটি নড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভোগান্তি আমাদের। প্রতিদিন গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন করি, তা গাড়ি ঠিক করতেই চলে যায় ‘রুমা আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সেতুর মাঝ দিয়ে অনেক অংশ ভেঙে পড়ে গেছে। সেতুর ওপর উঠলেই মনে হয় ভেঙে পড়বে। নিচে তাকালে ভয় লাগে। অনেক সময় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই যেতে হয়।’
পানপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সেতুটি পার হতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। রোগীদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেতে পারছেন না। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। সরকারের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ করে মানুষের দুর্ভোগ দূর করা হোক।’ এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ১২০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব ও ডিজাইন পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া চলাচলের সুবিধার্থে ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সংস্কার না হলে দুই পারের মানুষের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়বে এবং জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।






















আপনার মতামত লিখুন :