দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব, বিএনপি নেতা আবুল কালামও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ।


দেশ সময় প্রকাশের সময় : ২০২৫-১১-০৯, ১১:১৩ অপরাহ্ন /
দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব, বিএনপি নেতা আবুল কালামও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ।
print news || Dailydeshsomoy

প্রকাশিত

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিনে জায়গা দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে নায়েরগাঁও দক্ষিন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদও তার সহযোগী বিএনপি নেতা এনামুল হক মির্জি ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্টের পরে তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি খাসজমি, বাজারের জায়গা ও সাধারণ মানুষের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তার নির্দেশে কিছু প্রভাবশালী অনুসারী নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। এ ছাড়া তাদের আশ্রয়ে এলাকার তরুণদের জড়ানো হচ্ছে মাদক ব্যবসায়।

একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, তাদের জমি ও দোকান দখল করে ওই নেতারা এখন সেখানে ব্যবসা করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি, হুমকি কিংবা মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতিনিয়ত চাঁদা দাবি করে তাদের লোকজন। টাকা না দিলে দোকানে তালা মেরে দেয়। প্রতিবাদ করলে থানা পুলিশের ভয় দেখায়, মামলা দিয়ে জেলে ভরে দিবে।”

এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, ওই নেতাদের প্রভাব এতটাই বেশি যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিচার পযর্ন্ত দিতে ভয় পায়। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সম্প্রতি ঐ ইউনিয়নের বিভিন্ন যায়গায় আবুল কালাম আজাদের ছবি সম্মিলিত পোস্টার লাগানো হয়েছে, সেখানে দেখা যায়, তিনি বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) নামে একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, বন বিভাগের গাছ কেটে বিক্রি করা, ন্যায্যমূল্যের চাল গোপনে বাইরে বিক্রি, সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং বিচার-সালিশের নামে টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক অনিয়মে তিনি জড়িত। এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, ৫ আগস্টের পর থেকে হঠাৎ করেই আবুল কালাম আজাদের আর্থিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। তাদের অভিযোগ, তিনি নায়েরগাঁও বাজারে নিজের মালিকানায় একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছেন। তবে তার প্রকৃত আয়ের উৎস সম্পর্কে কেউ কিছু জানেন না। এ কারণে স্থানীয়দের প্রশ্ন, তিনি কোন আলাদিনের চেরাগ পেলেন?

অভিযোগের বিষয়ে নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি কোনো চাঁদাবাজি বা দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য পাওয়া গেলেও তার দুই সহযোগী এনামুল হক মির্জি ও মাহমুদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করে নাই। 

এ বিষয়ে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারপরও যদি প্রমাণ মিলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের একাংশ জানিয়েছেন, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচেতন মহল বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে এ ধরনের অপকর্ম বন্ধে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। না হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।