জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও স্থানান্তরের অভিযোগে ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আকরাম মিয়ার নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২০ নভেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক শারিকা ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১ এ মামলাটি দায়ের করেন। আসামির বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. আকরাম মিয়া ২০১০ সালের ১ জুন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হিসাবরক্ষক পদে মাসিক ৩০০০ টাকা বেতনে যোগদান করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কলেজ থেকে চাকরি বাবদ সর্বসাকুল্যে আয় করেন ৪২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে কিন্তু তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি প্রথমে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আইএফআইসির কোনাপাড়া শাখায় একটি স্থায়ী আমানত হিসাব খোলেন। যাতে ১৪ কোটি টাকা জমা রাখেন এবং ২০১৮ সালের জুনে একই ব্যাংকের একই শাখায় অন্য ২টি স্থায়ী আমানত হিসাব খুলে যথাক্রমে চার কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৩৩ লাখ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা জমা রাখেন। পরবর্তীতে এর ২০১৮ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে দুটো পে- অর্ডারের মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের কোনাপাড়া শাখা থেকে মোট ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় স্থানান্তর করেন। তা দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে আসামি নিজের নামে ২টি দুইটি স্থায়ী আমানত খুলেন। যাতে যথাক্রমে ১৪ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ও ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জমা রাখেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখা থেকে ৫ টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা বেসিক ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় স্থানান্তর করেন।
আসামি তার নামে বেসিক ব্যাংক লি. এর মাতুয়াইল শাখায় ৫টি স্থায়ী আমানত হিসেব খুলে উক্ত অর্থ জমা রাখেন এবং মেয়াদপূর্তিতে বর্ণিত পাঁচটি হিসাবের অর্থ ২০২২ সালের মার্চ মাসের একই ব্যাংকের একই শাখায় নতুন ৫ টি স্থায়ী আমানত হিসাব খুলে জমা রাখেন। বর্তমানে আকরাম মিয়ার নামে বেসিক ব্যাংক লিঃ এর মাতুয়াইল শাখায় উল্লিখিত ৫ টি স্থায়ী আমানত হিসাবে মোট ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৪ টাকা ৪৯ পয়সা গচ্ছিত রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, আসামি যোগদানের পর থেকে মিয়া অসাধু উপায়ে এ অর্থ অর্জন করেছেন এবং দখলে রেখেছেন যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ। আসামি ওই অর্থ কলেজের বলে দাবি করলেও এর সপক্ষে তিনি বা কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য/রেকর্ডপত্র প্রদান করেতে পারে।
২০১৭ সাল থেকে কলেজের অর্থ আকরাম মিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখার বিষয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের গভর্নিং বডির কোনো অনুমোদন বা রেকর্ডপত্র প্রদান করেতে পারেনি। এছাড়া কলেজের আয়-ব্যয় খাতওয়ারী হিসাবভুক্ত করে কলেজের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে রাখার বিধান রয়েছে, তা কোনো কর্মচারীর ব্যক্তিগত হিসেবে রাখার সুযোগ নেই।
অর্থাৎ আসামির ব্যাংকে থাকা ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৪ টাকা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ। আসামি মো. আকরাম মিয়া অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন এবং দখলে রেখেছেন এবং উক্ত অর্থের অবৈধ উৎস গোপন করার অসৎ উদ্দেশ্যে এ অর্থ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :