প্রকাশিত,১৯, অক্টোবর
সঞ্জিব দাস, গলাচিপা পটুয়াখালী ,প্রতিনিধি
সরকারি অফিস যেন বাসা বাড়ি গলাচিপা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার। টেবিলে গ্যাস লাইটার ও সিগারেটের উচ্ছিষ্টাংশ রাখার জন্য পাত্র। হাতে জলন্ত সিগারেট। গা-ছাড়া ভাব নিয়ে অফিসের চেয়ারে বসে খুব আয়েশ করেই প্রকাশ্যে সিগারেট ফুঁকছেন খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাসান সিকদার। তার কক্ষে ডুকে দেখা যায় সেবা প্রার্থীদের সামনে বসেই ধুমপান করছেন। সরকারি অফিসে বসে কর্মকর্তার এমন তুঘলকি কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেবা প্রার্থীরা।
গলাচিপা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয় জানতে তার অফিসকক্ষে গেলে প্রতিবেদকের সামনেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান সিকদার চেয়ারে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান শুরু করেন। যেখানে ২০১৩ সালে পাস হওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধিত আইনে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন অফিস চলাকালীন সময়ে নিজ কক্ষে বসে ধূমপান করেন তিনি।
ধূমপান বন্ধে ২০০৫ সালের প্রণীত আইন অনুযায়ী, প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয়েছিল ৫০ টাকা। কিন্তু পরে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধনী এনে জনসমাগম স্থলে ধূমপানের শাস্তির অর্থ ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। এছাড়া সরকারি অফিসে প্রকাশ্যে ধুমপান শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকান্ড বলে মনে করেন সেবা গ্রহীতারা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে, উপজেলা নির্বাহী অফিসের এক কর্মচারী বলেন, ‘অফিসে বসেই একের পর এক সিগারেট ধরান তিনি। তার একহাতে থাকে সিগারেট,অন্যহাতে সেবাগ্রহীতাদের ফাইলে স্বাক্ষর করেন। দুর্গন্ধে তার কক্ষে যাওয়া কষ্টকর। অফিসে যত লোকই থাকুক না কেন তিনি সবার সামনেই ধূমপান করেন। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।’ এদিকে সেবা প্রার্থীরাও জানান তিনি নিয়মিত অফিসের চেয়ারে বসে ধুমপান করেন আর সেবা দেন।
সম্প্রতি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাদশা প্যাদা দূর্নীতি গ্রস্থ খাদ্য নিয়ন্ত্রক উল্লেখ করে বিভিন্ন অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। সেখানে বাদশা প্যাদা তার ফোন ভেঙে ফেলার অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সরকারি অফিসে বসে ধূমপান করার বিষয়ে জানতে চাইলে গলাচিপা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো.মাহমুদুল হাসান সিকদার স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ধূমপান করি। তবে অফিসে সেবাগ্রহীতা থাকা অবস্থায় চেষ্টা করি না করার। আসলে এটা আমার উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করবো না। এখন থেকে বিষয়টি নিয়ে আরও সতর্ক থাকবো।’ আর ফোন ভেঙে ফেলার অভিযোগের বিষয় বলেন, ফোন ভাঙার কোন ঘটনা ঘটেনি, আমি ফোনটি ফ্লোরে রেখে দিয়েছি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'অফিসে বসে ধুমপান করা তার উচিত হয়নি। এ বিষয় তার সাথে আমি কথা বলবো। অফিসে বসে ধুমপান না করার জন্য অনুরোধ করবো।' এছাড়া অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।