প্রকাশিত,২৬,জুন, ২০২৪
বাদশাহ আব্দুল্লাহ।
শহরে মানুষ বাসা-বাড়ির ছাদে শখ করে বাগান করে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে থাকে। এগুলোর প্রধানতম উদ্দেশ্য হলো বাসা – বাড়ির ছাদে সবুজায়ন সৃষ্টি করা। শহরে থেকেও একটু গ্রামের প্রকৃতি অনুভব করা। একসময় মানুষ শহরকে বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র মনে করতো। বর্তমানে শহরের মানুষগুলো গ্রামের প্রকৃতির ছোঁয়ায় আনন্দিত হয় বেশি। শহরের বন্দীজীবনে থেকে মানুষ স্বস্তিতে নেই। ঢাকার পরিবেশ প্রতিনিয়তই জঘন্য হয়ে উঠছে। ঢাকায় মানুষ বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে যাচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’–এর তথ্যমতে, বায়ুদূষণে ২০২৩ সালে দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা।
দূষিত শহরে বসবাস করে মানুষ দিন দিন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গ বেড়েই চলছে।
ঢাকায় রাস্তার পাশে, ফ্লাইওভারের নিচে গড়ে উঠেছে ময়লা -আবর্জনার স্তূপ ।পথচারীরা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। শহর দূষিত হচ্ছে, মানুষ অস্বস্তিতে আছে এদিকে কারোও মাথাব্যাথা নেই।
বরং, সকলেই উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। উন্নয়ন হোক তা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। উন্নয়নগুলো পরিকল্পিতভাবে হোক।
দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা শীর্ষে থাকলেও, ওখানে স্বস্তি পাওয়ার মতো একটা স্থান ও রয়েছে। সেটি হলো ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। যেটি আমার ধারণা, ❝শহরের বুকে এক টুকরো গ্রাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ❞
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন।বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নানা প্রজাতির গাছ ও পাখি রয়েছে। এখানে, লেক ও আছে। গ্রামের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। হঠাৎ করে কেউ জাবিতে গেলে বুঝবেনা যে, সে শহরে এসেছে।
আমার ও এমন মনে হয়েছিল প্রথম। আমি একবার ( ৭ জানুয়ারি ২০২৪) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গ্রামের মতই খেলার মাঠ রয়েছে। বিকেলবেলা শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করে থাকে। সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ ও রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে ফুটে লাল শাপলা।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিরাও আসে। ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসতে শুরু করে ১৯৮৬ সালে । শীতে সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসে। হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে বছরের এই সময়ে প্রচুর তুষারপাত ঘটে। এসময় জীবন বাঁচাতে খাদ্যের খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে পাখিগুলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, লেকগুলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় অতিথি পাখিরা এখানে আসে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাবি ক্যাম্পাসে আর কতদিন প্রকৃতির সৌন্দর্যের মেলবন্ধন থাকবে তা এখন ভাবনা ও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শতাধিক গাছ কেটে আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবন-সংলগ্ন জলাশয়ের পাড়ে কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তখন শিক্ষার্থীরা গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, জলাশয়ের ক্ষতি না করে ভবন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে সেই জলাশয়ে মাটি ফেলে ভরাট করতে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।বিষয়টি জানাজানির পর গতকাল বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।[১৩ জুন ২০২৪, প্রথম আলো ]
প্রতিদিন পত্রিকা পড়া আমার অভ্যাস। এ সংবাদটি পড়ার পড়ে আমি মর্মাহত হয়েছি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ঢাকা শহরের মতো জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এ সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। জাবিতে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় কিছু প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষ ফুঁসে উঠে।
‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জাতীয় পর্যায়ের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।[ ১৩ জুন ২০২৪, প্রথম আলো ]
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ হোক কিন্তু গাছপালা কেটে কিংবা জলাশয় ভরাট করে নয়।
বাদশাহ আব্দুল্লাহ
লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :