প্রকাশিত,২৭,জুলাই,
আজাদ নাদভী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ভুল চিকিৎসায় জান্নাতুল ফেরদৌসে জেনি(৩০) নামের প্রসুতীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৬ জুলাই সন্ধায় উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের কুসুমপুর গ্রামের কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। নিহত জান্নাত জেনি উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের মৃত আজিজ খানের মেয়ে ও ইছাপুরা ইউনিয়নের লোহার পুকুরপার এলাকার হাশেম মেল্লার ছেলে নাঈম মোল্লার স্ত্রী।
নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানাযায়, জান্নাত জেনি কুশুমপুর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্টার শিরিন আক্তার কে আগে থেকেই দেখিয়ে আসছেন। সেই সুবাদে গত ২৫ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ওই ডক্টার কে রেগুলার চেকআপের কারনে দেখাতে যায়। সেখানে গেলে ডাক্টার শিরিন আক্তার নিহতের আলট্রা স্নো গ্রাফ করে এবং নিহতের পরিবারকে বলে বচ্চার সমস্যা আছে এখনি সিজার করাতে হবে অন্যথায় পরে সমস্যা হলে তাকে কিছু বলতে পারবে না। নিহতের পরিবারও সরল মনে ডাক্টারের কথা বিশ্বাস করেন এবং সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারি করাতে বলেন। পরে নিহতকে ওটিতে ঢুকানোর ৪০ মিনিট পরেও কোন সংবাদ না পেয়ে তারা সেখানে থাক একজনকে জিজ্ঞেস করলে বলে দুই জনই ভালো আছে। একটু পর তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে চাপ প্রয়োগ করলে পরিবারের কাছে বাচ্চা দিয়ে দেয় এবং বলে বাচ্চার ঠান্ডার সমস্যা দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে জান এবং মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে দ্রুত সম্ভব ৪ ব্যাগ রক্ত ব্যাবস্থা করেন। নিহতের পরিবার ৪ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে দেয়। এক পর্যায়ে কুশুমপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের পরিবারকে জানায় সিজার করার সময় একটা নাড় কেটে গিয়েছে। এখন রোগীকে সুস্থ করতে হলে জরায়ু সহ কেটে ফেলতে হবে। তখন জেনির পরিবার বলে যেটা ভালো হয় করেন। এর প্রায় ২ থেকে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট পরে তারা এসে বলে রোগী সুস্থ আছে। কথা বলছে। পরে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে আরো চাপ প্রয়োগ করলে কর্তব্যরত ডাক্তার জেনিকে ঢাকা একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউ তে রাখতে বলে। পরে জেনির পরিবার জেনিকে প্রথমে ঢাকার ধোলাইপারের ডেল্টা হসপিটালে নিয়ে যায় সেখানে আইসিইউ না থাকায় আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জেনি। এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নিহত জান্নাত জেনির দেবর মো: ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, কুশুমপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মিঠুন, ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও হাসপালের ব্যাবসায়িক পার্টনার আলী আহম্মদ কে একধিকবার বলার পরেও তারা আমাদের মিথ্যা কথা বলেছে। যখন দেখছে তারা আর বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারতেছে না তখন তারা আমাদের বলে রোগীকে ঢাকা নিয়ে যেতে। এই ঘটনার বিষয়ে আমরা সিরাজদিখান থানায় ডায়েরি করেছি।
এই বিষয়ে কুশুমপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষের মো. মিঠুন ও আলী আহম্মদের বক্তব্য চাইলে তারা কোন বক্তব্য না দিয়ে সাংবাদিককে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
নিহতকে চিকিৎসা করা ডাক্তার শিরিন আক্তার তাদের গাফিলতির বিষয় অস্বীকার করে বলেন, রোগীর অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছিলো। তাদের আমরা বলেছি ভর্তি করাতে। একটা রোগী ভর্তি না হলে তো আর চিকিৎসা করা যায় না। আর রোগীকে আমরা রেফার্ড করেছি ৯ টা ৩০ মিনিটে কিন্তু তারা এখান থেকে রওনা দিয়েছে ১০ টা বাজে।
সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আন্জুমান আরা বলেন, আমি বিষয়টি একাধিক লোকের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। কিন্তু নিহতের পরিবারের কেউ আমাকে এখনো কিছু জানায়নি বা কোন অভিযোগও করে নি।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মুজাহিদুল ইসলাম বলেন,শনিবার সকালে বিষয়টি শুনতে পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।তবে নিহতের পরিবারের কেউ বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি।তাই আমরাও কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
উল্লেখ্য এর আগে ২০২১ সালে এ হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় বৃষ্টি নামে ১৭ বছরের এক তরুণী এবং চলতি বছরের মাস তিন আগে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,উপজেলা যে সব প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ম ভর্তিভুতভাবে চলছে এবং সিজারিয়ান অপারেশন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আগেও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।নতুন করে আবারো অভিযান চালানো হবে।সেই সঙ্গে প্রসুতি মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজাদ নাদভী
২৭-০৭-২৪
আপনার মতামত লিখুন :