বাড়িতে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক সুদেব ।


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৩-১০-২৩, ৩:৫৫ অপরাহ্ন /
বাড়িতে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক সুদেব ।

প্রকাশিত,২৩, অক্টোবর,২০২৩

বেড়া-(পাবনা) প্রতিবেদকঃ

পাবনা বেড়ায় এল.এম.এ.এফ.পি ডিগ্রী নিয়ে নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাঃ সুদেব বিশ্বাস শুধু চিকিৎসাই দেন না তিনি ভর্তি রাখেন রোগী। নিজ চেম্বারকে বানিয়ে ফেলেছেন মিনি হাসপাতাল। তাই বলা যায় পল্লী চিকিৎসকের বাড়ি এখন হাসপাতাল।

নিয়মবহির্ভত ভাবে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চমক দেখিয়ে গ্রামীণ গরিব রোগীদের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নগরবাড়ি ১০ শয্যা বিশিষ্ঠ বাসন্তি বসু স্মৃতি হাসপাতালের সামনে ডাঃ সুদেব বিশ্বাস নিজ বাড়িতে ‘জনসেবা চিকিৎসালয়’ নামের একটি চেম্বার খুলে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখে আসছেন। তবে তাকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতার করে আসছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

নিজেকে ডাঃ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এতে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তবে জর নিয়ে কোন রোগী চেম্বারে আসলেই ডেঙ্গু রোগী বলে ভর্তি রাখেন তার হাসপাতালে।
তার চেম্বারের ভিতরে রয়েছে প্রচুর পরিমানের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের ভর্তি রাখার জন্য পাঁচ-ছয়টি বেড (সিট) রয়েছে। রোগী প্রতি ভিজিট নেন ৩শত টাকা। নিজেই ওষুধ লিখে নিজ চেম্বার থেকে আবার বিক্রি করেন ওষুধ আবার সুবিধা অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি রাখেন নিজের চেম্বারের বেডে।
ডাঃ সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা ময়সার আলী জানান, আমি লোকমুখে শুনে চরকল্যাণপুর থেকে জর নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে আইছি। ডাঃ সাহেব নানা রকম পরিক্ষা নিরিক্ষা করে আমাকে বলেছেন আমার ডেঙ্গু হয়েছে। তাই আমাকে ভর্তি করে স্যালাইন দিছে। আমারতো মনে হয় না আমার ডেঙ্গু হইছে এহানে আইসাইতো ফাইসা গেলাম।

নগরবাড়ি বাসুন্তিপুরের বাসিন্দা আজগর আলী জানান, পাশের সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এজন্য বাধ্য হয়ে মানুষ এই পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন। এখানে যে কোন রোগী আসলেই এই ডাঃ তাকে কোন রকম পরিক্ষা ছাড়াই স্যালাইন দিয়ে বেডে শুয়ে রাখে। তবে ডাঃ সুদেব বিশ্বাসের এই চেম্বারে প্রচুর রোগী আসেন বলে তিনি জানান।

পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুদেব বিশ্বাস বলেন, আমি বিধি মোতাবেক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি। পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মানুষকে ভালো সেবা দেই তাই আমাকে সবাই ডাঃ বলে ডাকে। আমার মত অনেক পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার পরিচয় দেয় আমি দিলে সমস্যা কি। পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তার বৈধ কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করে সাংবাদিককে অকথ্যভাষায় গালাগালি করেন। গালাগালির এক পর্যায়ে তিনি সংবাদিককে দেখে নিবেন বলে হুমকি দেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই ভুয়া পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সাধারণ রোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা বন্ধ করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ওপর জোর দাবি জানান তারা। স্থানীয়রা আরও জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদন ছাড়াই নিজ চেম্বারকে হাসপাতাল বানিয়ে নিয়েছেন তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পল্লী চিকিৎসকরা এমন অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব ভ‚মিকা পালন করছে বলে সচেতন মহলের দাবি।
এই বিষয়ে একাধিক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা আমাদের কোম্পানীর এন্টিবায়োটিক ওষুধও লিখে দেন রোগীদের। আর এই গিফট দিয়ে ওষুধ লেখার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে মার্কেটে কাজ করতে হয় আমাদের।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা ইউ.এই এন্ড এফপিও ডাঃ ফাতেমা তুয জান্নাত বলেন, এল.এম.এ.এফ.পি এটা কোন ডিগ্রীই মধ্যেই পরে না। এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারে না। ওই পল্লী চিকিৎসকের বিষয়ে আমি শুনেছি। আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদ ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।