প্রকাশিত,২৩, জুলাই,২০২৩
মারুফ সরকার,স্টাফ রির্পোটারঃ
১৯৭৫ সালের খুনীদের দোসররা পরিচয় গোপন করে এখন টিভি চ্যানেলের মালিক হয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলা টিভি’র মালিকানায় থাকা সৈয়দ সামাদুল হকের সংগে পচাত্তরের খুনীদের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র থাকার পরেও কেন তাকে আওয়ামী লীগ সরকার একটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
একদা সেনা বাহিনীতে কর্মরত সৈয়দ সামাদুল হকসহ বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকান্ডে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই বিদেশে আত্মগোপন করে। সৈয়দ সামাদুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ আলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা লন্ডনে গিয়ে আত্মগোপন করে এবং সেখানে খুনীচক্রের একটি গোপন কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক খন্দকার মুশতাকের ভাগ্নে সৈয়দ ওয়ালী আশরাফের সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার সংগে যুক্ত হন সৈয়দ সামাদুল হক এবং বিবিসি’র বাংলা বিভাগের সংগে যুক্ত হন সৈয়দ মাহমুদ আলী। সৈয়দ সামাদুল হক পচাত্তরের খুনী নূর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার সংগে লন্ডনে বাকি খুনীদের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করেন যা মাহমুদ আলীর এক সাক্ষাতকার থেকে জানা যায়। বিবিসি বাংলা বিভাগ থেকে সেই সাক্ষাতকারের কারণে মাহমুদ আলীকে সরিয়ে দেওয়া হলেও প্রবাসে বাংলাদেশীদের সংগে বিশেষ করে আওয়ামী-বিরোধী মহলের অর্থায়নে সৈয়দ সামাদুল হক বাংলা টিভি নামক চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করে নিয়মিত আওয়ামী-বিরোধীদের মুখপাত্র হিসেবে চ্যানেলটিকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সামাদুল হক রাতারাতি বাংলা টিভির শেয়ার হস্তান্তর করে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন। লন্ডনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সংগে এলএমএম ব্যবসা শুরু করে প্রবাসীদের বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার কারণে সৈয়দ সামাদুল হক দেশে থেকে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ব্যবসা শুরু করেন।
অপরদিকে ব্যক্তিজীবনে নারীঘটিত কেলেংকারির কারণেও লন্ডনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং বিপুল পরিমাণে টাকা দিয়ে কোর্টের বাইরে তা নিষ্পত্তি করা হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সৈয়দ সামাদুল হক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাকে দিয়ে একটি টিভি লাইসেন্সের আবেদন করেন। হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে সৈয়দ সামাদুল হকের সেনা কানেকশন ব্যবহার করে অতি দ্রুততম সময়ে বাংলা টিভির লাইসেন্স ও সম্প্রচার অনুমতি পেয়ে যান। তারপর থেকে এই টেলিভিশন চ্যানেলটি হয়ে ওঠে সৈয়দ সামাদুল হকের একমাত্র উপার্জনের পথ। একাধিকবার এই চ্যানেলের শেয়ার বিক্রি করলেও গাফফার চৌধুরীকে যে শেয়ার দেয়ার কথা ছিল তা তিনি দেননি। মৃত্যুর আগে গাফফার চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বলেছেন যে, সৈয়দ সামাদুল হকের কথা ছিল তাকে এই চ্যানেলের ত্রিশ ভাগ শেয়ার দেয়ার কিন্তু দু’বার ঢাকায় আসার টিকিট আর কিছুদিন সৈয়দ সামাদুল হকের স্ত্রীর রান্না করা খাবার ছাড়া আর কিছুই তিনি পাননি। এমনকি ঢাকায় এলে গাফফার চৌধুরী যাতে আর কারো সংগে দ্যাখা করতে না পারেন সে জন্য তার সংগে কারো যোগাযোগও নিয়ন্ত্রণ করতেন সৈয়দ সামাদুল হকের স্ত্রী পিংকি।
চ্যানেলটি যাত্রা শুরুর আগেই এখানে যারা কাজ শুরু করেছিলেন তাদের সংগে সৈয়দ সামাদুল হকের গন্ডগোল শুরু হয়। সাপ্তাহিক জনমত কিংবা লন্ডনের বাংলা টিভির মতোই তিনি এখানেও বিনা পারিশ্রমিকে সাংবাদিক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ দিতে চেয়ে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু হলে তিনি একযোগে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও কর্মচারীকে ছাটাই করেন। বিষয়টি তখন সরকারের জন্যও বেশ লজ্জার কারণ হয়ে পড়ে।
এরপর থেকেই সৈয়দ সামাদুল হক বাংলা টিভিকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা বিদেশে পাচার করছেন বলে তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠজনরাই দাবী করেছেন। বর্তমানে দুদক তার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও মানি লন্ডারিং এর তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু সচেতন মহল এই প্রশ্ন তুলেছেন যে, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে জেল হত্যা ও পঁচাত্তরের খুনীদের সংগে একসংগে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে এবং আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লন্ডনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে তিনি কী করে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স লাভ করেন? সরকারের যে কোনো দূর্বলতা নিয়ে ইতোমধ্যে যে চ্যানেল তথাকথিত সুশীলদের নিয়ে টক শো’র নামে সরকার-বিরোধীতার মেলা বসিয়ে দেয় সে চ্যানেলটি অচিরেই যে একটি সরকার-বিরোধী ষড়যন্ত্রের আখড়ায় পরিণত হবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। যেমনটি ১৯৭৫ সালে হয়ে উঠেছিল জনমত এবং বিএনপি-জামায়াত আমলে লন্ডনের বাংলা টিভি। এখনো লন্ডনে একাধিক ব্যাক্তি দাবি করেন যে, বাংলা টিভির শেয়ার বিক্রির নাম করে তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সামাদুল হক তা আর ফেরত দেননি। ইতোমধ্যেই ঢাকার বাংলা টিভি নিয়েও শেয়ার বিক্রির কেন্দ্র খুলে বসেছেন পঁচাত্তরের খুনীচক্রের অংশীজনক সৈয়দ সামাদুল হক।
আপনার মতামত লিখুন :