প্রকাশিত, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
সঞ্জিব দাস,গলাচিপা, পটুয়াখালী , প্রতিনিধিঃ
দক্ষিনাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর গলাচিপায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপদাহ চলছে। এই তাপপ্রবাহের ফলে জন জীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। উপজেলায় বিগত দিনে তাপদাহের জন্য পুকুরে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে রয়েছে শত শত চাষীরা। খাল নদী থেকে পুকুরে পানি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের সুহুরী ১ম খন্ড এলাকার সুফিয়ান মৃধার ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০) জানান, ৬০ শতাংশ জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষ করেছি। পুকুরে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বড় চিংড়ি মাছ চাষ করে আসছি। কয়েক সপ্তাহে তীব্র তাপদাহে ও বৃষ্টির না হওয়ায় পুকুরের পানি কমে যাওয়ার গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মাছগুলোর গায়ে পচন দেখা দিয়েছে। এতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই রকমের ঘটনা ঘটেছে চর সুহুরীর তালেব প্যাদার সমিতি করা ৪টি পুকুরের মাছ। শনিবার সকাল থেকে মাছগুলো মরে ভেসে উঠা শুরু হয়েছে। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের খবির মৃধা ও জাফর মৃধা জানান, গরমে পুকুরে মাছ চাষে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় দূর থেকে মেশিনের সাহায্যে পানি আনা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় গোলখালী ইউনিয়নের সুহুরী ১ম খন্ড এলাকার মোঃ ছুরাত আলীর ছেলে জেলে জাকির হোসেন সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি মানুষের কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমির একটি পুকুর লিজ নেই। পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতীর প্রায় ২ লক্ষ টাকার মাছ চাষ করেছি। এর পিছনে খাবার দিতে আরো ৫০ হাজার খরচ হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গরমের কারণে পানি গরম হয়ে উঠেছে। আজ সকাল থেকেই মাছগুলো মরে ভেসে উঠেছে। এ বিষয়ে গলাচিপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দাস বাড়িতে কালিপদ দাসের ছেলে পরেশ দাস গং এর ৬ শতাংশের একটি পুকুর ও ১২ শতাংশ দৈর্ঘ্য একটি মাছের ঘের আছে। পরেশ দাস জানান, আমি এ বছর ৫ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছি। কিন্তু ৫ শত টাকার মাছও পানিতে এখন নাই। সব মরে ভেসে উঠেছে। প্রতি বছর মাছ বিক্রি করে আমাদের ৫ ভাইয়ের যৌথ পরিবারের সংসার চলে। এখন আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। সাহা বাড়ির নির্জন সাহা বলেন, ২টি পুকুরে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মাছ ছেড়েছি। আজ দুপুর থেকে মাছ মরার হিরিক শুরু হয়েছে। কী যে করব ভেবেই পাচ্ছি না। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি বাড়ির মৃত. মো. আলাউদ্দিনের ছেলে মো. আফজাল হোসাইন বলেন, আমার মামার ছোট একটা পুকুর আছে। শখের বসে সেখানে ৫০ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছি। গরমে পুকুরের পানি কমে গিয়ে মাছগুলো মরে যায়। ডাকুয়া ইউনিয়নের দিলীপ রঞ্জন গাঙ্গুলীর ছেলে পঙ্কজ গাঙ্গুলী জানান, তার পুকুরে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাছ ছিল। কিন্তু মাছগুলো হঠাৎ মরে ভেসে ওঠে। রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে আমির হোসেনের পুকুরের প্রায় ৯০ হাজার টাকার মাছ মরে যায়। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উপজেলার শত শত মাছচাষীরা উৎকন্ঠে রয়েছে বলে জানা গেছে। গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী বলেন, প্রচন্ড গরমে হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে। এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মাছ মারা যাবার খবর কোনো কৃষক জানায়নি। তবে তীব্র তাপদাহে মাছ চাষীরা বিপাকে রয়েছে। দিনের বেলায় পুকুরে জাল টেনে তলদেশ থেকে গ্যাস বের করা, চুন লবন প্রয়োগ করা, পানি সেচের ব্যবস্থা করা সহ নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।