নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন, ৩০০ আসনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের ৪৭ জন নেতা নির্বাচনে গেছেন। সমর্থক পর্যায়ে সে সংখ্যা শতাধিক পর্যায়ের হবে।
নির্বাচন কমিশন তপসিল ঘোষণায় উদার হলে অর্থাৎ আরেকটু সময় বাড়ালে বিএনপির আরো শতাধিক নেতা নির্বাচনে যেতে পারত।
তারেক রহমানের নেতৃত্ব বিএনপির কোন নেতা মানছে না বলেই, তাঁদের আন্দোলনটিও কথিত। জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে তাঁরা অতি অবশ্যই জামায়াতেবাদী। তাঁরা জনস্বার্থ উদ্ধারের রাজনীতি করে না। বিএনপিকে পুনর্গঠন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পরে কাউন্সিল করাটাই চ্যালেঞ্জ। নতুন নেতৃত্ব ছাড়া এই দলের ভবিষ্যৎ নেই। নির্বাচনে যাওয়া তৃনমূল বিএনপি ও বিএনএম এর মত দলকে অবশ্য প্রমাণ করেই রাজনীতি করতে হবে।
রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- শীর্ষক সেমিনারে নাসিম এ কথা বলেন। এদিন নির্বাচনে যান নি এমন দুইজন বিএনপি নেতাকে সেমিনারে দেখা যায়।
যারা নাসিমের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তাঁরা হলেন, সাবেক সাংসদ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এস এ সুলতান টিটু ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া সেমিনারে তৃনমূল বিএনপিতে যোগ দেয়া বিএনপি নেতাবর্গ আব্দুল কাদির তালুকদার, জব্বার হোসেন, এম এ ইউসুফ, জুলফিকার আলী, সরকার বাদল, মোজাফফ্র হোসেন, খলিলুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ মাঠ করেন, বিএনপি নেত্রী আসমা শহীদ।
বিল্ড বেটার বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় কে এইচ এন রিসার্চ টিমের উদ্যোগে এই সেমিনারে কামরুল হাসান নাসিম বলেন, পৃথিবীতে নানা ধরণের শাসন ব্যবস্থা মানচিত্র ভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোয় ভর করেছে। কোথাও গণতন্ত্র, কোথাও সমাজতন্ত্র, কিংবা কোথাও ইসলামী শাসনতন্ত্রও জায়গা করে নিয়েছে।বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যত ১৯৯১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করেছে। গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ বাংলাদেশে সাধিত না হলেও গণতন্ত্রের দরজায় টোকা দেয়ার চেষ্টাটা প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের আছে। তবে, দেশ পরিচালনা করতে হলে সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হবে, এমন প্রস্তুতি নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের মানসিক প্রস্তুতি থাকে।
নাসিম বলেন, বিএনপিকে বরাবরের মত কার্যত, বিদেশি শক্তির উপর নির্ভর করে রাজনীতি করার অপউদ্যোগে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
এহেন রাজনৈতিক অপশক্তিকে গেল একযুগে বাংলাদেশে বিনাশ করা যায় নি, যা ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা, গবেষক দল তা বলছে। এমতাবস্থায় দেশের সচেতন মানুষকে শপথ নিয়ে সেই ধরণের রাজনৈতিক অপশক্তি মোকাবিলাকরত উদ্যোগে ভাসতে পারলে বাংলাদেশ পথ হারাতে পারে না। ভবিষ্যতে টেকসই গণতন্ত্রের লক্ষ্যে থেকে আপাতভাবে চলমান গণতন্ত্র কে বিজয়ী করতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন বিকল্পও নেই।
নাসিম বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি, যারা ফলত কথিত জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে-----তাঁরা মুলধারার রাজনীতি থেকে সরে পড়ছে। অথচ, আওয়ামী লীগের মত জাতীয়তাবাদী দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশাত্মবোধে আপ্লুত থেকে জাতীয়তাবাদের শর্ত পূরণ করে আদর্শিক অবস্থান শক্ত করার সুযোগ তাঁদের ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি জনপ্রিয় দল হয়েও শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক দল হওয়ার চেষ্টা করেনি। তাঁরা অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী , মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী কিংবা আওয়ামী লীগবিরুদ্ধ জনশ্রেণির সমর্থন আদায় করতে কেবল সক্ষম হয়েছে। উত্তরণের পথ হিসাবে তাই এখন বিএনপি পুনর্গঠন করা জরুরি। এই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল বিএনপি কিংবা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট এর মত নতুন দলগুলোকে আগামীদিনে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ভুমিকা রেখে তথা জাতীয় স্বার্থে নানা ধরণের অবদানের উপর তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে অনুমিত হয়। নতুন এই দুইটি দলকে স্বাগত জানানোর সুযোগ আছে। তবে, তাঁদেরকে প্রমাণ করতে হবে। জনস্বার্থ উদ্ধারে দলগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অনুশীলন থাকবে কিনা, জাতীয়তাবাদকে সঙ্গী করতে পারবে কিনা, কিংবা প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী অথবা সাম্রাজ্যবাদ শক্তিকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রের স্বার্থ উদ্ধারে মনোযোগি হতে পারবে কিনা ! এই প্রশ্নগুলো সামনে আসবে। যেমন, বিএনপির মত দলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমসাময়িক রাজনৈতিক নীতিগুলোর বিরুদ্ধে বক্তব্য বিবৃতির প্রয়োজন ছিল। তাঁরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করুক কিংবা তাঁদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই করুক----কিন্তু, নিজের দেশের ওপর একটি বিশেষ দেশ কর্তৃক অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক স্যাংশনপ্রত্যাশী হওয়ার মধ্যে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা হয় না।
জাতীয়তাবাদের সাধারণ সংজ্ঞায় আমরা বলছি যে, জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদ একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে এবং জাতির অর্জনসমূহকে সামনে তুলে ধরে।
যখন তাই একটি আধিপত্যবাদী মহাশক্তিধর রাষ্ট্র দিবানিশি বাংলাদেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিবে বলে হুশিয়ারী দিচ্ছে, আর তখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট নিজেরা নিষ্পত্তি না করার উদাহরণে যেয়ে রাজনৈতিক দল বলে নিজেদেরকে মানুষের দল বলে ঘোষণা রাখছে, এমন কৃষ্টি তাঁদেরকে রাজনৈতিক অপশক্তি হিসাবে দাঁড় করায়। যা বিএনপির এক হিসাবে জোর করে শীর্ষ নেতৃত্বধারী ব্যক্তিসত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায়। দলটির অনেকেই তা মেনে নিতে পারছে না বলেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বগুড়ার মত বিএনপি অধ্যুষিত আসনগুলোয় বিএনপি নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেখা যাচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে পুনর্গঠন হওয়া জরুরি। অন্যদিকে জাতীয়তবাদের ওপর দাঁড় হয়ে রাজনীতি তাঁরা করতে পারছে না। যেমন, জাতীয়তাবাদের প্রচলিত ব্যাখায় বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ গঠিত হয় আধুনিক সংবেদনশীল সংমিশ্রণ এবং অতিরঞ্জন দুটি অতি প্রাচীন ঘটনা- তথা, জাতীয়তা এবং দেশপ্রেম নিয়ে। যা বিএনপি জাতীয়তা প্রশ্নে বাংলাদেশি হিসাবে জাত চেনাতে চাইলেও দেশপ্রেমের অনুশীলনে থাকতে পারছে না। উপরন্ত তাঁদের দলের মধ্যকার নেতৃত্ব সংকট অস্বস্তিতে রাখছে ।