প্রকাশিত, ১৮-১১-২০২০
নসন্দী জেলা প্রতিনিধি ঃ
নরসিংদী জেলার সদর থানার হাজিপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতি বেগমকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার আসামিরা জামিনে বের হয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার।
নরসিংদি সদর উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খানের নাতনি এবং শরীফুল ইসলাম খানের বড় মেয়ে অগ্নিদগ্ধে জান্নাতি,হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইয়াবা সহ গ্রেফতারের পরেও একাধিক মাদক মামলার আসামির জামিনে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া তে, মৃত জান্নাতের পরিবার
ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
বিচারিক কাজে কালক্ষেপন এবং সুষ্ঠ বিচার না পাওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করে জান্নাতির বাবা।
নরসিংদির বাদুয়ার চর কাজি আবুল হাসেম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী থাকা অবস্থায় জান্নাতি আক্তার (১৬) চরহাজিপুর (খাসের চর) গ্রামের শান্তি বেগম এর ছেলে শিবলী আহমেদ শিবু (২৮) কে ভালবেসে ২০১৮ সালে বিয়ে করে। বিয়ের পর জান্নাতি আক্তার কে শান্তি বেগম পুত্র বধু হিসেবে মেনে নিলেও বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তাকে মাদক ব্যবসা করার জন্য এবং যৌতুকের জন্য জান্নাতিকে পরিবারিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু জান্নাতি আক্তার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে বড় হওয়ায় সে মাদক ব্যবসা করতে রাজি হয়নি। যার ফলে তাকে সহ্য করতে হয়েছে বহু অত্যাচার। সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে কয়েক বার তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে আপোষ করে শান্তি বেগম পুত্র বধু জান্নাতি কে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপরেও মাদক ব্যবসা করার জন্য এবং যৌতুকের জন্য পরিবার থেকে জান্নাতিকে বারবার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে বলে অভিযোগ করেন জান্নাতির বাবা। কিন্তু জান্নাতি আক্তার রাজি না হওয়ায় তার শাশুড়ি শান্তি বেগম, শশুর হুমায়ুন (৫৫) পিতা- মৃত শফিক মিয়া, স্বামী- শিবলী আহমেদ শিবু, ও ননদ ফাল্গুনী আক্তার (১৯) পিতা হুমায়ুন সর্ব সাং চরহাজিপুর ( খাসেরচর), থানা ও জেলা নরসিংদি, উল্লেখিত ৪ জন মিলে গত বছর ২১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে জান্নাতিকে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল আনুমানিক ৭.৩০ মিনিটে শশুর বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে গত ০৫/০৫/২০১৯ ইং তারিখে নরসিংদি জেলা দায়রা জজ আদালতে নারী, শিশু নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে অগ্নিদগ্ধ জান্নাতির দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান। মামলার নম্বর- ১৪৭/১৯। সে মোতাবেক মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই এর রির্পোটে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। জান্নাতির শরীরের বেশির ভাগ অংশই আগুনে পুড়ে যায়। ঘটনাটি আনুমানিক সকাল ৭.৩০ মিনিটে ঘটলেও জান্নাতির শশুর বাড়ির কেহ জান্নাতিকে হাসপাতালে নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে অবশেষে আনুমানিক দুপুর ১২.০০ টার সময় জান্নাতিকে নরসিংদি সদর হাসপাতালে নিতে বাধ্য হয়। সেখান থেকে একই দিনে অগ্নিদগ্ধ জান্নাতি কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান এবং ভর্তি করান জান্নাতির পরিবার। সেখানে ৪০ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ ৩১ মে মারা যায় জান্নাতি।
১৫ জুন ২০১৯ তারিখে জান্নাতির পিতা শরীফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে শান্তি বেগম কে প্রধান আসামি সহ ৪ জনকে আসামি করে নরসিংদি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার ফলে পলাতক থাকা ৪ আসামিকে নাটোর থেকে গ্রেফতার করা হয়। নিম্ন আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে কিন্তু তারা উচ্চ আদালতে থেকে জামিন নিয়ে বাদী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করতে থাকে। জানা যায়, অভিযুক্ত পরিবারটির সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। জান্নাতি হত্যার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় আবার ও মাদক ব্যবসা শুরু করে। জানা যায়, গত ২৯ জুন নরসিংদির বিলাসদির সাকিনস্থ নামক স্থানে নতুন রাস্তায় কালা মিয়ার চা এর দোকানের পাশে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নরসিংদি থানা পুলিশের এস, আই নইমুল ইসলাম মোস্তাক সঙ্গীয় ফোর্স সহ অভিযান চালিয়ে ১০০ পিছ ইয়াবা সহ জান্নাতিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি শান্তি বেগম কে গ্রেফতার করে। শান্তি বেগমের স্বামী হুমায়ুন, গ্রাম- চরহাজিপুর, থানা ও জেলা- নরসিংদি। গ্রেফতারকৃত মাদক সম্রাজ্ঞী নারী কিলার শান্তি বেগমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ইয়াছমিন আক্তার ( ৪৯) পিতা- মৃত শফিক মিয়া, গ্রাম- দত্ত পাড়া, থানা ও জেলা নরসিংদি কে ও গ্রেফতার করা হয়। ইয়াছমিন আক্তার ( ৪৯) আসামি মাদক সম্রাজ্ঞী নারী কিলার শান্তি বেগমের স্বামী হুমায়ুনের আপন বোন। এ ব্যাপারে নরসিংদি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে , যার নং- ৪৯, তারিখ ৩০ জুন ২০২০। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তারা উচ্চ আদালতে থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে জান্নাতির পরিবারের অন্য সদস্যদের কে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান অব্যাহত রাখে বলে অভিযোগ করে জান্নাতির বাবা।
আপনার মতামত লিখুন :