দুবাই-মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি তরুণীদের ডান্সের নামে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করান কামরুল !


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৪-০২-০৭, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন /
দুবাই-মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি তরুণীদের ডান্সের নামে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করান কামরুল !

প্রকাশিত,০৭, ফেব্রুয়ারি,২০২৪

ক্রাইম রিপোর্টঃ

ড্যান্স ক্লাবে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গত এক বছরে ৭২৯ জন তরুণীকে দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা ফেনীর জেলার ছাগলনাইয়া প্রবাসী কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিম আক্তার কণা।

শুধু তাই নয়, কম বয়সী এ তরুণীদের বিদেশে নিয়ে যৌন পেশায় বাধ্য করান কামরুল ইসলাম।আর যৌন পেশায় যেতে রাজি না হলে চলতো অমানবিক নির্যাতন।

তেমনি পাচারের শিকার রিয়া (ছদ্মনাম) জানালেন লোমহর্ষক এক ঘটনা। তিনি জানান, আমি এখানে ডান্স শিখেছিলাম।ওই চক্রের এক সদস্য ভালো বেতনে ডান্স বারে চাকরির কথা বলে আমাকে দুবাইতে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর প্রথম ১০ থেকে ১২ দিন আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছিল চক্রটি। এবং বারে ডান্স করার সুযোগও দিয়েছে। এরপরে ওই বারের গেস্টদের ফোন নম্বর দেয়া হয় এবং আমাকে কথা বলতে বলে, আমি রাজি না হওয়ায় চলে আমার ওপর নির্যাতন।

তিনি বলেন, দুবাইয়ের তার ডান্স বারে টোকেন সিস্টেমে যৌন কাজ হয়। আর প্রতিদিন ২০টি টোকেন না দিতে পারলে কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম সহ তাদের সদস্যরা আমাকে মারধর করতেন। এরপর আমাদের জোর করে মদ পান করায়, তারপর আমাদের রুমে ওই গেস্টদের পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই দুবাইতে যন্ত্রণাময় কয়েকমাস কাটিয়েছি আমরা। সাথে ওই বারে বাংলাদেশি কয়েকটি মেয়ে ছিল। কথা না শুনলে তাদের ওপর চলতো নির্যাতন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ২০টি টোকেন না দিতে পারলে মারধরের সঙ্গে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়া হতো। এবং চলতো দিনভর মানসিক নির্যাতন। আর ২০টি টোকেন দিতে পারলেই তাদের মাস শেষে নামমাত্র কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়া হতো। তবে পাচার হওয়া তরুণীরা কিন্ত ওই চক্রটির নির্ধারিত জায়গায় থাকে।

দুবাইতে পাচারের শিকার আরেক তরুণী জাহানারা (ছদ্ধনাম) বলেন, দুবাইতে আমাকে যে স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে প্রায় ৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি তরুণীকে দেখেছি। যারা সবাই প্রতারণার শিকার। তাদের দিয়ে দুবাইয়ের বিভিন্ন বারে দেহ ব্যবসা করাতেন কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগি কণা আক্তার মিম।

তিনি বলেন, যে নির্ধারিত টোকেন না দিতে পারে তাদের ঘরে বন্দী করে দু তিনদিন খাবার বন্ধ করে দেয় চক্রটি। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে চলে টানা মারধর।
পাচারের শিকার মিতু ( ছদ্ধনাম) নামে আরেক তরুণী দিলেন সবাইকে সতর্ক বার্তা। তার একটাই অনুরোধ, ভবিষ্যতে যেন কোনো মেয়ে এ ধরনের প্রলোভনে জীবন নষ্ট না করে।

সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ঐসকল তরুণী বললেন, আমরা তো বাংলাদেশেরই মেয়ে, আমাদের ক্যারিয়ারে দায়িত্ব আপনারাই নিন। বিদেশে যেন কোনো মেয়ে আর পাচার হতে না পরে সেদিকে নজর দিন।

অভিযোগ আছে সৌদি, কাতার,বাহরাইনে ভালো অবস্থানে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসী শিল্পপতি,হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে তরুনীদের ছবি পাঠিয়ে তাদের দুবাই ইনবাইট করেন কামরুল ইসলাম ও মিম আক্তার কণা।

এ বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান,
পাচার হওয়া মেয়েদের বেশিরভাগ ১৬ থেকে ২২ বছর বয়সী। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, পাচার হওয়া তরুণীরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সুন্দরী মেয়ে। তাই খুব সহজেই তাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট করা যায়। আর এ দুর্বলতাকেই কৌশল হিসেবে নিয়েছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রটি।

কামরুল ও কনা আক্তার মিম চক্রের সন্ধান পায় র‍্যাবের একটি দল।এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা গুলশান,বনানী,পল্টন, খিলগাঁও থানার গোড়ান এলাকা থেকে আটক করে অনিক হোসেন, মনির হোসেন, আক্তার হোসেন, আফতাউল ইসলাম পারভেজ ও আবদুল হান্নান নামে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যকে। ওই রাতেই আটকদের হেফাজতে থাকা চার তরুণীকে উদ্ধার করা হয়, যাদের পাচার করার প্রস্তুতি চলছিল।

এ সময় ওই স্থান থেকে ৭০ জন তরুণীর পাসপোর্ট, ২০০ পাসপোর্টের ফটোকপি, অর্ধশত বিমানের টিকিট, অর্ধশত ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা জব্দ করে র‍্যাব।

তিনি আরো বলেন আটকদের মধ্যে আকাশ এবং হান্নান ‘মোবিন এয়ার’ নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। এছাড়া আক্তার হোসেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ‘গাঙচিল’ ও ‘তারার মেলা’ নামে দুটি ড্যান্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রশিক্ষক এবং অনিক হোসেন রাজধানীর উত্তরার ‘এডিসি অনিক ড্যান্স কম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রশিক্ষক।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায় ফেনী ছাগলনাইয়া প্রবাসী কামরুল ইসলাম মাধ্যমে তারা দুবাইয়ে তরুনীদের পাঠান। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে তরুনীদের রিসিভ করেন করেন কামরুল এর অন্যতম সহযোগী কণা আক্তার মিম ।সে আরো বলে গোল্ডেন টু-লিপ চাফরান বুটিক সহ বেশ কয়েকটি নাইট ক্লাব পরিচালনা করেন কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিম আক্তার কনা।

র‍্যাবের অনুসন্ধান ও অভিযান পরিচালনাকারী দলের নেতৃত্ব দেয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, মূলত এ পাচারকারী চক্রের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে বিভিন্ন গার্মেন্টসে কর্মরত স্বল্প শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীসহ পারিবারিক ভাঙন ও বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার তরুণীরা।
এ চক্রের সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি ও পাসপোর্ট অফিসের লোকজনসহ দালাল চক্রের শতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে।জড়িতদের দুবাই দ্রুতাবাসের কাছে অভিযোগ করে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনা হবে, ও র‍্যাব তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহসহ অন্যান্য সদস্যদেরকেও আইনের আওতায় এনে নারী পাচার বন্ধে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান র‍্যাবের এ কর্মকর্তা।

কামরুল ইসলাম এর বিষয়ে ছাগলনাইয়া থানায় সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ হাসান ইমামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি থানায় নতুন এসেছি তার বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি অভিযোগ আসলে আমরা তার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে খবর নিবো তারপর আপনাদের জানাতে পারবো।

এই বিষয়ে কামরুলের মুঠো ফোনে একাধিক বার কল দিয়ে ও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।