প্রকাশিত,০৮, অক্টোবর,২০২৩
মারুফ সরকার ,সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারঃ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে চলে জমজমাট অবৈধ দেহ ব্যবসা।কিছুদিন আগে নারী পাচারের অভিযোগে ঢাকা থেকে নৃত্যশিল্পী ইভান সোহাগ গ্রেফতার হওয়ায়, দুবাইয়ের অনেক প্রবাসী ব্যবসায়ীই গা ঢাকা দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশী ফেনীর ছাগলনাইয়ার প্রবাসী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী শরীয়তপুর জেলার পালং থানার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী কণা আক্তার মিম চক্র।
মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম বাংলাদেশী অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের দুবাইতে বিউটি পার্লারে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক অনৈতিক কার্যক্রম করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।সুধু তাই নয় জোরপূর্বক বিভিন্ন হোটেলে ও ক্লাবে যেতে বাধ্য করে তারা। না গেলে শারিরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করেন তারা।
মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম দুইজনে মিলে দুবাই আল রিগা এলাকায় গোল্ডেন টিউলিপ দেরা হোটেল নাইট ক্লাব কুইন-১ ও দুবাই দেরা এলাকায় সাফরণ বুটিক হোটেল নাইট ক্লাব কুইন-২ ও সোনার বাংলা স্যাটেলাইট সহ তিনটি নাইট ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরকে দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন ।
বাংলাদেশি এসব দালালদের মাধ্যমে মূলত তিন উপায়ে মেয়েদের দুবাই আনা হয়। প্রথমে টার্গেট করা হয় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীদের। যারা মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাবে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনেকে আবার এখানে নাচ শিখতে আসেন। এসব ক্লাবের সঙ্গে দেশীয় যুক্ত হয়ে এসব অনৈতিক কাজ করান মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম।
বিভিন্ন দেশে ‘মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ পরিবেশনের নামে এসব ড্যান্স ক্লাব থেকে মেয়েদের হায়ার (ভাড়া) করে মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম চক্র।এখানে দেখানো হয় মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন।
“ড্যান্স ক্লাবে আসা অধিকাংশ মেয়েই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাদের টাকার প্রয়োজন। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কর্তারা অনেক মেয়েকে দেখে বলেন, ‘তুমি তো ড্যান্স পার না, তোমাকে কীভাবে নেব”
মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম এসব ড্যান্স ক্লাব ও ফার্ম দুবাইয়ের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। দুবাইয়ের হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী ড্যান্স ক্লাব অথবা বিদেশী বাংলাদেশী প্রাবাসীদের কাছে মেয়েদের সরবরাহ করেন।
দুবাইয়ের কর্মরত এক তরুণী নাম প্রকাশ না করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল দুবাইয়ে তিন মাসব্যাপী একটি নাচের অনুষ্ঠান হবে। এজন্য আমাদের তিন মাস থাকতে হবে। প্রতি মাসে ৫০ হাজার করে তিন মাসে দেওয়া হবে দেড় লাখ টাকা। বাংলাদেশে থাকাকালীন অগ্রিম দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। প্লেনের টিকিট এবং থাকা-খাওয়া ফ্রি।’
সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হয় গোল্ডেন টিউলিপ দেরা হোটেল নাইট ক্লাব কুইন-১ কর্মরত বাংলাদেশি এক তরুণীর সঙ্গে। তিনি জানান, বারে কর্মরত অধিকাংশ মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকেই নিজ দেশে কোনো তরুণের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি, প্রেমও করেননি। কেউ কেউ এখানে এসে তরুণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তারা শুধু প্রেমিকের সঙ্গেই রাত কাটাতে চান। কিন্তু মালিকরা তাদের বাধ্য করেন অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে। রাজি না হলে মেয়েদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মারধরের পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অথবা জোর করে মদ পান করিয়ে অন্যের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরও জানান, এক্ষেত্রে কম বয়সী মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হন বেশি। কারণ, সেখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে রাত কাটাতে বেশি আগ্রহ দেখান। অন্যদিকে, নাচের বাইরে অন্যকিছু করতে চান না মেয়েরা। এ কারণে নির্যাতন করে তাদের পাঠানো হয়। একজন তরুণীর সঙ্গ পেতে বাংলাদেশি গ্রাহকরা সর্বোচ্চ তিন হাজার দিরহাম (প্রায় ৭২ হাজার টাকা) পর্যন্ত দিতে রাজি থাকেন।
নির্যাতন করা হয় যেভাবে
দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশি মালিকানাধীন সাফরণ বুটিক হোটেল নাইট ক্লাব কুইন-২ বারে কর্মরত অপর এক তরুণী সাংবাদিকদের জানা, মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম তারা নাচের প্রোগ্রামের মিথ্যা কথা বলে আমাকে দুবাইয়ে এনেছেন,আমি জানতাম না যে তাদের এখানে গ্রাহকদের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হবে। যেসব মেয়ে রাজি হন না, প্রাথমিকভাবে তাদের রাজি করানোর জন্য মেয়ে লিডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই মেয়ে লিডার বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। হুমকি-ধামকিও দেন। এতে কাজ না হলে চড়-থাপ্পড় মারা হয়।তাতেও কাজ না হলে নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।
‘অনেক সময় দুই হাত ও পা বেঁধে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় মুখে মদ বা নেশাজাতীয় পানীয় পান করিয়ে রাজি করানো হয়। অনেক মেয়ে নির্যাতনের মুখে দেশে ফিরে আসতে চান। মালিকরা তখন তাদের হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে ওই মেয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য হন’—বলেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।
সর্বপরি ভুক্তভোগী তরুনীদের একটাই দাবী মোঃ কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী কণা আক্তার মিম কে বাংলাদেশে ফিরে এনে দ্রুত আইনের আওতা নিয়ে আশা হোক,যাতে করে বাংলাদেশী নিম্নআয়ের আর কোনো বাবা মায়ের মেয়ে এমন প্রতারকের হাতে না পড়ে এদের দ্রুত আইনের আওতা আনার ও জোর দাবী করেছেন ঐ ভুক্তভোগী তরুণীরা।
এই বিষয়ে প্রতারক কামরুল ও কণার আক্তার মিমের সাথে যোগাযোগ করে ও কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।