বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২+২) বৈঠক। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চোখ ছিল রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য ছিল তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
তবে বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের অবস্থান নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে। এনিয়ে বিএনপির মধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত বক্তব্য পাওয়া গেছে। দলটির কোনো কোনো নেতা বলছেন, ভারত তাদের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করছে। অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেমন সরাসরি প্রভাব বিস্তার করেছিল, এবার দেশটি সে অবস্থানে নেই। আবার দলটির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, ভারত আগের মতোই একটি পাতানো নির্বাচন সমর্থনের পথেই হাঁটছে।
তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া থাকলেও বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশটি জনগণের চাওয়াকেই প্রাধান্য দেবে।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। বাংলাদেশ ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কোয়াত্রা বলেন, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সে দেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’ ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
২৮ অক্টোবর পুলিশি অভিযানে পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির মহাসমাবেশ।
মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় যৌথ বিবৃতি জারি করে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে অবশ্য বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচনে ওতপ্রোতভাবে ভূমিকা রাখা দুই দেশের বৈঠক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন বিএনপি নেতারা। এনিয়ে দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভারতের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। ভারতের সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন যেনতেনভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং ভারত আওয়ামী লীগের বাইরে কিছু চিন্তা করবে না বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যতক্ষণ সম্পর্কের অবনতি না ঘটবে ততক্ষণ বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে না।’
মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় যৌথ বিবৃতি জারি করে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে অবশ্য বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচনে ওতপ্রোতভাবে ভূমিকা রাখা দুই দেশের বৈঠক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন বিএনপি নেতারা। এনিয়ে দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভারতের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। ভারতের সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন যেনতেনভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং ভারত আওয়ামী লীগের বাইরে কিছু চিন্তা করবে না বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যতক্ষণ সম্পর্কের অবনতি না ঘটবে ততক্ষণ বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে না।’
এই নেতারা মনে করেন, ‘ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের শুক্রবারের ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত তাদের অবস্থানে অনড়, যেটা দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের দৃষ্টিতে দেখতো, এখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) সম্পর্ক গড়ে তুলবে বিষয়টি নিয়ে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি/
বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারতের সমর্থন ছিল। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা সেই সমর্থনের ধারাবাহিকতা কি না, নাকি ভারত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই আমি মনে করি।’
দলটির বিদেশবিষয়ক কমিটির সদস্য মীর হেলাল বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনের ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের জনগণ কোন পক্ষে আছে, জনগণ চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। যে কারণে আমাদের অবরোধ কর্মসূচি জনগণই সফল করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক, কোনো দলের সঙ্গে নয়। বাংলাদেশের জনগণ যেটা চাচ্ছে, তার সঙ্গে ভারত একমত থাকবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘দিল্লিতে যে বৈঠক হয়েছে এবং যে যৌথ বিবৃতি এসেছে, সেখানে আমরা দেখলাম বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো পক্ষ কথা বলেনি। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে, সেটা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন। এখানে আমাদের একটাই কথা থাকবে, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের মানুষের যে কথা, মানুষের চাওয়াকে মূল্যায়ন করেছে। আশা থাকবে ভবিষ্যতেও ভারত বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া প্রাধান্য দেবে। কোনো একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বা কোনো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমি একটু ভারতকে মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ যেমন তার প্রতিবেশী বদলাতে পারবে না, ভারতও কিন্তু তার প্রতিবেশী বদলাতে পারবে না। আমাকে যেমন ভারতকে পাশে নিয়ে থাকতে হবে, ভারতেরও তেমন বাংলাদেশকে পাশে নিয়ে থাকতে হবে। ভারতের জন্য এটা খুব নিরাপদ হবে না যদি বাংলাদেশের মানুষ ভারত সরকারের কারণে তাকে প্রতিপক্ষ মনে করে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া, এটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। আশা করি ভারত আমাদের এ আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’
আপনার মতামত লিখুন :