গ্রাহকদের বীমার টাকা নিয়ে ছলচাতুরি স্যার আপনি যদি মারাও যান তা হলে দাফন করতে দিমু না’


দেশ সময় প্রকাশের সময় : ২০২৪-১০-০১, ৭:১৬ অপরাহ্ন /
গ্রাহকদের বীমার টাকা নিয়ে ছলচাতুরি    স্যার আপনি যদি মারাও যান তা হলে দাফন করতে দিমু না’

প্রকাশিত,০১,অক্টোবর

সঞ্জিব দাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

স্যার আপনি যদি মারাও যান তা হলে দাফন করতে দিমু না। আপনার কথায় আমরা চরাঞ্চলের গরীব মানুষগুলো বীমায় রাখার জন্য টাকা দিয়েছি কাউকে চিনি না, আপনি আমাদের টাকা দিয়া দ্যান। অতি কষ্টে পড়ে এ প্রতিবেদককে জানালেন প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি:-এর অ্যাজেন্টকর্মী ও চর বিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: ইব্রাহীম খলিল।

জানা গেছে, গলাচিপা শাখায় হাতে গোনা কয়েকটি বীমা কোম্পানি রয়েছে। প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি:-এর গলাচিপা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফিডার রোডে অফিসটি অবস্থিত। এদের মাঠকর্মী বা অ্যাজেন্টকর্মী রয়েছে ৪০ জন। গ্রাহক আছে ১২০০ জন। বেশিরভাগ গ্রাহকরা মহিলা। এরা গলাচিপা অফিসে এলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এড়িয়ে থাকে। এ অফিসের সহযোগিতায় অ্যাজেন্টকর্মীদের মাধ্যমে গ্রাহকরা প্রায় তিন থেকে চার কোটি টাকা জমা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, জমাকৃত টাকার বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। ফলে দুশ্চিন্তায় আছেন গলাচিপার প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি:-এর গ্রাহকরা। এমনকি গ্রাহকরা টাকা আদৌ পাবেন কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

গলাচিপা সদর ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের গ্রাহক হাজরা বেগম জানান, ‘পোলিসি নম্বর ০১২৯৩৫৩-৬, টাকা পাওয়ার তারিখ ছিল ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অথচ অফিসে যোগাযোগ করার পরও এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৬০ টাকা পাইনি।’

বোয়ালীয়া গ্রামের গ্রাহক অভিনাস জানান, ‘পোলিসি নম্বর ০১০০৭৬২-৪, টাকা পাওয়ার তারিখ ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর। অফিসে পাঁচ বছর ধরে ঘুরতেছি টাকা পাইনি।’

চর বিশ্বাস গ্রামের বীমার অ্যাজেন্ট ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল জানান, ‘আমার চার শ’-এর উপরে গ্রাহক রয়েছে। জীবনে ভুল করেছি এ বীমা কোম্পানিতে প্রবেশ করে। গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে আমাকে ধরে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। ঘরের ভেতর লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। যে সমস্ত কথা বলছে তা কষ্টের কথা।’

রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন গ্রামের অ্যাজেন্টকর্মী পিয়ারা বেগম জানান, ‘বীমা কোম্পানি থেকে গ্রাহকদের টাকা তুলতে না পারায় একই এলাকার খোকন ডাকুয়ার স্ত্রী নুর চেহারা বেগমকে মারধর আর ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে তার স্বামী। আর আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সাহানারা বেগমকে তালাক দেয়ার হুমকি দিয়েছে তার স্বামী এবং এমনও ঘটনা ঘটেছে বীমার টাকা না পেয়ে চরবেষ্টিনে স্ত্রীর ওপর রাগ করে স্বামী অন্য একটি বিয়ে করে ঢাকা গিয়ে বসবাস শুরু করছে। ভূক্তভোগী নারীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর সমাধান চেয়েছে।

অ্যাজেন্টকর্মী ডাকুয়ার ছোটচত্রা গ্রামের বিপুল ভূইয়া, বাশবাড়িয়া গ্রামের বাদল চন্দ্র রাজা, সুতাবাড়িয়া গ্রামের বলরাম জানান, ‘বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গ্রাহকদের টাকা পয়সা না দেয়ায় অ্যাজেন্টকর্মীদের গরু মহিষ নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি কারো কারো পকেট থেকে টাকা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

কালারাজা গ্রামের আ: রাজ্জাক খান জানান, ‘মহা বিপদে আছি গ্রাহকদের টাকা পয়সা দিতে না পারায় গালমন্দ করছে। অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাওয়া যাচ্ছে না।

গলাচিপা শাখার প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি: সার্ভিস সেল এ জি এম তপন চন্দ্র রায় জানান, ‘গ্রাহকদের বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দাবিকৃত টাকা পাচ্ছেন না। কোম্পানিকে অবহিত করলেও তারা টাকা না দিয়ে ছলচাতুরি করছে এতে গলাচিপা অফিসের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বহু গ্রাহক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ফেরত আসেন এবং উপজেলা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। লিগ্যাল নোটিশ, এমনকি বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও সমাধান হচ্ছে না।’

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্স কো: লি: প্রধান কার্যালয়ের, ঢাকা-মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: সাইদুর আমিনকে গলাচিপা অফিসের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কিছুই নাই কয়েক দিনের মধ্যে সবই ঠিক হয়ে যাবে। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলায় দুই শ’ চেক বিতরণ করা হয়েছে, বীমার কাগজপত্র জমা দিলেই পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের চেক দেয়া হবে এবং সবাই টাকা পাবে।’