প্রকাশিত,২৪,অক্টোবর
সঞ্জিব দাস, গলাচিপা পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জায়গা আছে, ঘর আছে কিন্তু নেই কোনো আসা-যাওয়ার পথ, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। বসবাসের অনুপোযোগী হওয়ায় বসবাস না করার কারণে এ যেন ভুতুড়ে বাড়ি।
সরেজমিন গিয়েও ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া গেছে, ভুক্তভোগী পরিবারটি নিজের বাসা থাকতে ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন ঘটনাই ঘটেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিপি বেগমের ভাগ্যে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিপি বেগম জানান, তার নানা মৃত নুরুল ইসলাম তালুকদার হাদিস মিয়ার কাছ থেকে ক্রয়কৃত সম্পত্তি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে খাদ্যগুদামের পূর্ব পার্শ্বে গলাচিপা মৌজায় জেএল-৪৯ ও ৫৮/৫৯ নম্বর দাগে ১২ শতাংশ জমি রেখে যান। তার নানার সেই সম্পত্তি থেকে ২০০৬ সালে নানি, এক মামা, চার খালার কাছ থেকে ক্রয়কৃত ০.০৫ শতাংশ ও মা মৃত জহুরা বেগমের অংশসহ মোট ০.০৫৬২ শতাংশ জমির মালিক হন।
জমি ক্রয়ের পরে তৎকালীন পৌর মেয়র মরহুম ওহাব খলিফা, কাউন্সিলর ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে পাশ্ববর্তী জমির মালিক নেছার মেম্বরদের ১.৫০ ফুট ও নিজেদের ১.৫০ ফুটসহ মোট ৩ ফুট যৌথভাবে যাতায়াতের জন্য রেখে বাকি জমি বণ্টন করে দেওয়া হয়। যেহেতু সামনের অংশে তার আপন মামা আলাউদ্দিন তালুকদার পৈতৃক ভিটায় দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছিলেন তাই তাকে সামনের অংশে রেখে লিপি বেগমকে পেছনের অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর বণ্টনকৃত নিজ জায়গায় লিপি বেগম একটি ঘর নির্মাণ করেন। ঘর নির্মাণ করার পরেই তার মামা আলাউদ্দিন তালুকদার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাতায়াতের জন্য একমাত্র যৌথপথটি পাকা দেয়াল তৈরি করে আটকে দেয়। এছাড়া পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
বর্তমানে তার মামা ও মামাতো ভাই মৎস্যজীবী লীগ নেতা তমাল তালুকদার নগদ ২ লাখ টাকা, ১.৫০ ফুট প্রসস্থ পথের পরিবর্তে নির্ধারিত জমি ও উক্ত পথের জায়গা রেখে পাকা সীমানা প্রাচীর তৈরি করে দেওয়ার দাবি করে। বাস্তবে ১.৫০ ফুট যাতায়াত পথ দিয়ে হাঁটাচলা করা অসম্ভব। অথচ সরকারি নিয়মানুযায়ী রেকর্ডীয় শরিকানা জমিতে যৌথ যাতায়াত পথ বাধ্যতামূলক থাকতে হবে; কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে দীর্ঘ ১৭ বছর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাননি বলে জানান লিপি। তাই তিনি মানবিকতার দিক থেকে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার পাওয়া উচিৎ তা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে আলাউদ্দিন তালুকদারের কাছে মুঠোফোনে জানার জন্য বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উক্ত বিষয়ে তৎকালীন সাবেক কাউন্সিলর মাওলানা আ. জব্বার জানান, সেই সময় পৌর মেয়র ওহাব খলিফাসহ আমি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে আসা-যাওয়ার পথের জায়গা যৌথভাবে রেখে বাকি জমি বণ্টন করে দেওয়া হয়। পরোক্ষভাবে আমি জানতে পেরেছি সেই পথের জায়গা দেয়াল করে আটকে দেওয়া হয়েছে। আমার দৃষ্টিতে এটা অমানবিক।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাসিম রেজা জানান, সরকারি আইনে এ ধরনের যাতায়াত পথ আটকে রাখার বিধান নেই। অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।