প্রকাশিত
সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
গলাচিপা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিবাগ এলাকায় উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড় এখন ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এখানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যা দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বাড়িয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।
শান্তিবাগ এলাকায় যে স্থানটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, তা মূলত সড়কের পাশে উন্মুক্ত জায়গা। একসময় সেখানে প্রতি শনিবার গরুর হাঁট বসত। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকত এলাকা। কিন্তু বর্জ্য ফেলার কারণে গরুর হাঁট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আর বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার গাড়িগুলো নিয়মিতভাবে এখানে গৃহস্থালি, ব্যবসায়িক ও চিকিৎসা বর্জ্য ফেলে যায়। এমনকি মরা পশু-পাখিও এখানে ফেলা হয়, যা দুর্গন্ধ ছড়ানোর অন্যতম কারণ। মাঝে মাঝে বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, ফলে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশরাফ বলেন, গরমকালে দুর্গন্ধ এত বেশি হয় যে, দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও থাকা যায় না। ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শিশুরা ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী ডলি বেগম বলেন, পৌরসভার লোকজন নিয়মিত ময়লা ফেলে রেখে চলে যায়। আমরা বহুবার বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ময়লার ভাগাড় না সরালে বড় কোনো অসুখ ছড়িয়ে পড়বে। ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে একটি জলাশয়, যা একসময় স্থানীয়রা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন বর্জ্যের কারণে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় গৃহবধূ তানিয়া বেগম বলেন, আমরা এতদিন এই জলাশয়ের পানি রান্না ও গোসলের কাজে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন তা দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। আমাদের কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেই।
গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মো. নূর উদ্দিন বলেন, উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি শুধু পানি, মাটি ও বায়ু দূষণই করে না, বরং পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা বাড়ায়। খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পেয়ে মশা, মাছি ও ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যায়। এর ফলে ডেঙ্গু, কলেরা, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করে ফেলা, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য রিসাইক্লিং করা ও ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা জরুরি।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের সেচ্ছাসেবক সজিব আহমেদ বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সবার সচেতন হওয়া দরকার। শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নাগরিকদেরও উদ্যোগী হতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা ও পৌরসভা উদ্যোগ নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
গলাচিপা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা গেলে পরিবেশ দূষণ কমবে এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কাজ করছি। পৌরসভার বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ ও ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে, যাতে শহরের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা যায়।”
স্থানীয় বাসিন্দারা আশাবাদী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এবং গলাচিপার পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে। তারা একটি স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসের সুযোগ চান।
আপনার মতামত লিখুন :