গণতন্ত্র নেই, একদলীয় হুকুমনামা চলছে ।


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৪-০৫-০৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন /
গণতন্ত্র নেই, একদলীয় হুকুমনামা চলছে ।

প্রকাশিত,০৫,মে,২০২৪

প্রতিদিন সকালবেলা পত্রিকার পাতা খুললেই রাজনৈতিক সমালোচনামূলক বক্তব্যই চোখে পড়ে বেশি। টেলিভিশনে ও প্রতিদিন কোনো না কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছেই। এতো আলোচনা -সমালোচনা কিসের জন্য? দোষারোপের রাজনীতির শেষ কোথায় হবে? বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র এদেশে চর্চা হয় না।গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যেখানে জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। কিন্তু এদেশে গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসনব্যবস্থা জারি রয়েছে। একক আধিপত্যের লাগাম টেনে ধরতে হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। একক আধিপত্য ও কৌশলে বর্তমান সরকার দশম,একাদশ এবং দ্বাদশ নির্বাচনে সরকার গঠন করেছে। জনগণ তাদের সাথে আছে কিনা এদিকে খেয়াল নেই। পদ্মা সেতু,মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অসংখ্য উন্নয়ন করেছে বর্তমান সরকার। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট নয় দেশের সিংহভাগ জনগণ। সরকার জনগণের উপর চেপে বসে আছে।শুধু উন্নয়ন দিয়ে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করা যায় না, এটা জানা ছিল না আওয়ামীলীগ সরকারের। এত উন্নয়নের পরে ও জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটার একমাত্র প্রধানতম কারণ হচ্ছে জনগণের স্বাধীনতা এ সরকার দিতে পারে নাই। বারবার জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে বর্তমান সরকার । আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির কারণেই আজ গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ চরম দুঃসময় পালন করতেছে এ সরকারের আমলে। এ সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির কারণেই জনগণের উপর চাপসৃষ্টি হচ্ছে। আয় থেকে ব্যয় বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সকল রাষ্ট্রযন্ত্র আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের নির্বাচনব্যবস্থায় ধস নেমে গেছে। নির্বাচনগুলো জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হচ্ছে। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকুক আর নাই থাকুক নির্বাচন কমিশন তাতেই মুগ্ধ। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। একটি নির্বাচন সফল ও স্বার্থক তখনই হয় যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ও তেমন আগ্রহ নেই, জনগণের ও নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মত দল অংশগ্রহণ করে নাই। বিএনপির মিত্ররা ও নির্বাচনে যায়নাই। এতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায় নাই।বিএনপির মত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল দ্বাদশ নির্বাচনে না থাকাতে কিভাবে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য ধরা যায়। সরকার ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রকে চিরতরে কবর দিয়ে দিছে। বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে সঠিক পথে রয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।তাদের একটাই লক্ষ্য গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজপথে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় ইতিমধ্যে কিছু নেতাকর্মী দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে চলে যাওয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছে। তবুও বিএনপি তে ভাঙন নেই। অনেক নেতাকর্মী হামলা -মামলায় জর্জরিত হওয়ার পরে ও বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি সবসময়ই নেতাকর্মীদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে নিয়মিতই বিএনপির নেতারা কর্মসূচি পালন করছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করার পরে ও বর্তমান সরকারকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজেদের মধ্যে কিছুটা হলেও ক্লান্তি – হতাশা রয়েছে। বিএনপি ও তাদের শরিক দলগুলোর প্রতি সরকারের বিবেকহীন আচরণে জনগণের কাছে সরকার ইতিমধ্যে নিন্দিত হয়েছে। বিএনপির প্রতি দেশের জনগণের আস্তে আস্তে ভালোবাসা কাজ করতে শুরু হয়েছে। কারণ, বিএনপি দালালির রাজনীতি করছে না।বিএনপির প্রতি যে অত্যাচার -নির্যাতন হচ্ছে এটা দেশের মানুষ অনুভব করছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে চরম দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে শক্তভাবে সংসদে কথা বলার মত বিরোধী দল নেই। জাতীয় পার্টি অনেকটাই সরকারের পরোক্ষ ইশারায় কোণঠাসা হয়ে রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের শক্তভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও সর্বশেষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের চরম দ্বন্দ্বের কারণে জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন পরেই জাতীয় পার্টির ভাঙন সৃষ্টি করে রওশনপন্থীরা। জাতীয় পার্টি বর্তমানে সংসদে প্রধান বিরোধী দল। যে দলটি সরকারের নানাচাপে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তারা কতটুকুই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের হয়ে কথা বলবে তা সময়ের ব্যাপার। জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় ( ২৭ এপ্রিল , ২০২৪) জিএম কাদের স্বীকার করেছেন,দ্বাদশ নির্বাচনে ওনার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। ডামী নির্বাচনের নানা অনিয়ম জিএম কাদের স্বীকার করেছেন। ডামী নির্বাচনে বিজয়ী বিরোধী দলের এমপিরা শুধুই সংসদের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থায় এদেশে সঠিক রাজনীতি চর্চা করা দুষ্কর হয়ে গেছে। তবুও শত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি এদেশের জনগণের সম্মান ও ভালোবাসা রয়েছে। এদেশে সম্মানের রাজনীতিতে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে।গণতন্ত্র নষ্টের পিছনে বর্তমান সরকার দায়ী।

বাদশাহ আব্দুল্লাহ
লেখক, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক