প্রকাশিত,১১,আগস্ট
সঞ্জিব দাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি
দোকান থেকে মামুন হাওলাদার (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে গেল পুলিশ।
১৫ দিন পর হাসপাতাল থেকে লাশ হয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো তাকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে মামুন হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
মামুন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার পাগলা বউবাজার এলাকার বালুর ব্যবসা করতেন। তিনি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের মুজাফফর হাওলাদারের ছেলে। ১৮ বছরের সংসারে মামুনের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে জাকারিয়া ইসলাম জয় ফতুল্লা হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। ছোট মেয়ে জিদনি, বয়স মাত্র চার বছর। পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারটি।
নিহতের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জানান, গত ২২ জুলাই দিবাগত রাতে মামুনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন সকালে থানায় গেলেও পরিবারকে মামুনের সাথে দেখা করতে দেয়নি। এরপর প্রতিদিনই পরিবারের সদস্যরা মামুনের সাথে দেখা করার জন্য যেত, কিন্তু পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। প্রতিদিনের মতো গত ৬ আগস্ট দেখা করতে গেলে পুলিশ জানায়, মামুন হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় মামুনের নিথর দেহটা পড়ে আছে; অথচ পরিবারকে মৃত্যুর খবরটাও জানানো হয়নি।
জাকিয়া সুলতানা আরো জানান, মামুনকে কোটা আন্দোলনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে মুক্ত করার জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। ৩০ হাজার টাকা দিলে অন্য কোনো সাধারণ অভিযোগ দেখিয়ে সহজেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের কাছে তখন ওই পরিমাণ টাকা ছিল না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মামুনের স্ত্রী বলেন, গেল ভালো মানুষ, ফিরল লাশ হয়ে। তিনি তো কোনো রাজনীতি করতেন না। আমি কার কাছে বিচার চাইব? মা হেলেনা বেগম (৬৭) ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ। কাউকে দেখলেই হাউমাউ করে কেদে ওঠে। মা জানান, আমার একমাত্র ছেলের উপার্জনেই সংসার চলত। এখন কে হাল ধরবে সংসারের?
গত মঙ্গলবার মধ্য রাতে মামুনের লাশ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার পানখালী গ্রামে। নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় লাশ। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল কোটা আন্দোলনে চারজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও প্রকৃত অর্থে এ উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।