কালো পতাকা গণমিছিলে সমমনা দলগুলো বলছে সরকার বিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৩-০৮-২৬, ৫:১৬ অপরাহ্ন /
কালো পতাকা গণমিছিলে সমমনা দলগুলো বলছে সরকার বিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।

প্রকাশিত,২৬ আগস্ট ২০২৩,

নিজস্ব প্রতিবেদঃ

সরকার আন্তর্জাতিক বিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে
সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে আন্দোলনরত ৪২টি রাজনৈতিক দল শুক্রবার রাজধানীতে পৃথকভাবে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে। দলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটে আছে।

এদিন একই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এছাড়া যুগপতে না থাকলেও একদফা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি)। গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা আন্তর্জাতিক বিশ্বেও বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নইলে সেপ্টেম্বর মাসে আখেরি লড়াই শুরু হবে, পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’

গণতন্ত্র মঞ্চ : বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কালো পতাকা গণমিছিল বের করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিলিটি এলিফ্যান্ট রোড হয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে দেশকে একদম সর্বশেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা কারও কাছে জবাবদিহি করে না। এই সরকার অবিচারক, তাদের কাছে বিচার চেয়ে কোনো লাভ হবে না। সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বর মাস থেকে আখেরি লড়াই শুরু হবে জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই সরকারকে নাকে খত দিয়ে পদ থেকে সরতে বাধ্য করিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকারকে অচিরেই পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার বুঝে গেছে তাদের আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘ব্রিকস সম্মেলনে ইথিওপিয়ার মতো দেশ সদস্য হতে পেরেছে। আর আপনি (সরকারপ্রধান) যখন সদস্য হওয়ার জন্য নাম প্রস্তাব দিয়েছেন তখন পাশের দেশ বিরোধিতা করেছে। আমেরিকার স্যাংশন আছে বলে তারা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়নি।’ আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।

১২ দলীয় জোট : বিকালে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করে ১২ দলীয় জোট। এর আগে জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য দেন জোটের মুখপাত্র কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার প্রমাণ ব্রিকস সম্মেলন। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিশ্চিত। কিন্তু কোনো স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার বিশ্বে মর্যাদা পায় না।’ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি বলব সরকার বাহাদুর আপনারা অবিলম্বে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিন।’

এলডিপি : বিকালে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা গণমিছিল বের করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলপূর্ব সমাবেশে এলডিপি প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘সমগ্র দেশ চোর, ডাকাত, লুটেরা ও বাটপাড়দের হাতে বন্দি। তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে নামতে হবে। যদি জনগণ রাজপথে না নামে তাহলে আওয়ামী চক্র দেশকে ধ্বংস করে দেবে।’

অলি আরও বলেন, ‘দেশের জন্য আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে বড় বোঝা। আর কোনো পথ নেই। এই সরকারের পতনই একমাত্র সমাধান। তাই বলছি, সবাই রাজপথে নেমে আসুন। একদফা দাবিতে আয়োজিত সকল কর্মসূচি সফল করুন।’

গণমিছিলে অংশ নেন এলডিপির নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, মাহে আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন, বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট নিলু, মেহেদী হাসান মাহবুব, আলী আজগর বাবু, ওমর ফারুক সুমন, ঢাকা মহানগর পূর্বের মো. সোলায়মান, পশ্চিমের সাহাদাত হোসেন মানিক, উত্তরের অবাক হোসেন রনি প্রমুখ।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : বিকালে পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে কালো পতাকা গণমিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে ফকিরাপুল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু জনগণ জেগে উঠেছে, তারা আর এ ধরনের কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। সুতরাং এই সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে।’

এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এসএম শাহাদাত, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, আব্দুল বারিক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণদলের শাহ আলম, এনপিপির মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ।

এবি পার্টি : যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও এক দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবন চত্বরে অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। এতে অবিলম্বে পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর অথবা বিকল্প হিসাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এবার পদত্যাগ করে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দিন। জনদাবি উপেক্ষা করে ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে সরকার নিজেই নিজের অপমানজনক পতন ডেকে আনছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দলটির যুগ্ম-সদস্য সচিব বিএম নাজমূল হকের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারী সদস্য-সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান ও ছাত্র পক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স।
এছাড়াও রাজধানীতে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণফোরাম (একাংশ) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ববি হাজ্জাজ নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।