কাজের মানে আপোষহীন মুরাদনগরের প্রকৌশলীর


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৪-০৬-০৪, ১২:৫৬ অপরাহ্ন /
কাজের মানে আপোষহীন মুরাদনগরের প্রকৌশলীর

প্রকাশিত, ০৪,জুন, ২০২৪

প্রিয়ন্ত মজুমদার, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

যেখানেই নিম্নমানের কাজ হচ্ছে জানতে পারেন সেখানেই ছুটে যান কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. রায়হানুল আলম।

সম্প্রতি রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়নাধীন টনকি ইউনিয়নের সিএমবি বাজার হতে টনকি সড়ক ভায়া বাইরা সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ সমাপ্ত হলে ল্যাব টেস্ট সাপেক্ষে সড়কের মেরামতের জন্য ইটের খোয়া বিছানোর অনুমতি দেন উপজেলা প্রকৌশলী। কিন্তু কোন ল্যাব টেস্ট বাদেই ঠিকাদার রাতের আঁধারে নিম্নমানের ইট ও রাবিশ বিছিয়ে কাজ সম্পাদনের উদ্যোগ নিলে অভিযোগ চলে যায় উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে ও পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
পরদিন সকালেই তিনি ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি প্রেরণ করে সত্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেন ও ঠিকাদারকে নিম্নমানের মালামাল সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে নিজেই উপস্থিত হয়ে রাবিশ সরানোর জন্য নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। তারপরেও মাসখানেক অতিক্রান্ত হয় এই রাবিশ সরানোর কাজে। এই ব্যাপারে ঠিকাদার এস এস ইন্টারন্যাশনালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, ‘মূল রাস্তা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাই উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে এক্সক্যাভেটর ব্যবহার না করে শ্রমিক দিয়ে রাবিশ সরানোর কাজ শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ধান কাটার মৌসুম চলে আসায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয় যার কারণে বিলম্ব হয়। বর্তমানে সব রাবিশ অপসারণ করা হয়েছে।’

টনকি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জনাব তুহিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,‘নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এই অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানাই। দেরিতে হলেও অফিসের দৃঢ়তায় ঠিকাদার খারাপ মালামাল সরাতে বাধ্য হয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক, অনেক মানুষ চলাচল করে। একটি ভাল কাজ আমাদের সবার চাওয়া। এই জন্য আমরা প্রকৌশল অফিসকে সবরকম সহযোগিতা করছি।

৬০ লক্ষ টাকা মূল্যের এই কাজটি ৫% নিম্নদরে লটারিতে কাজ পাওয়া এস এস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জনাব শামিমকে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যে, প্রথমে কাজ ঠিকমতই হচ্ছিলো। পরে কাজের মূল মিস্ত্রি জনৈক রফিক ঈদের আগে কাজ শেষ করার তাড়াহূড়ায় তাকে না জানিয়ে নিম্নমানের ইট নিয়ে এসে রাতের আঁধারে কাজ করতে গিয়েছিলো। বর্তমানে এগুলো সরিয়ে নতুন করে কাজ করতে গিয়ে অনেক লোকসানের সম্মুখীন হলেও বিধি অনুসারে মানসম্পন্ন কাজ না করলে কাজের বিল পাবেন না বিধায় ভুল স্বীকার করে সংশোধনের চেষ্টা করছেন, জানান ঠিকাদার শামীম।

সিএন্ডবি বাজারের দোকানদার জনাব মফিজ মিয়া বলেন, রাস্তার কাজে এখানে রাবিশ এনেছিলো। পরে একাধিকবার অফিস থেকে ইঞ্জিনিয়ার আসে। এখন সব সরিয়ে নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে প্রকৌশলী মো. রায়হানুল আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘ দেখুন আমাদের সাথে ঠিকাদারদের মানসম্পন্ন ও টেকসই কাজ বাস্তবায়ন করার চুক্তি হয়। আমরা সীমিত জনবল নিয়ে অনেকগুলো কাজ তদারকি করি। সার্বক্ষণিক সাইটে লোক রাখা বাস্তব সম্মত নয়। এক্ষেত্রে ঠিকাদারের দায়বদ্ধতা আছে। উপকারভোগি এলাকাবাসির অংশগ্রহনও প্রয়োজন। টনকির রাস্তায় রাতের আধারে খারাপ কাজ করতে গেলে এলাকাবাসি থেকে আমরা অভিযোগ পাই এবং ব্যবস্থা নিই। কাজ করতে গিয়ে ভুল-ত্রুটি হলে সেটা সংশোধন করার সুযোগ দেওয়াও চুক্তির শর্তের মধ্যেই আছে। এক্ষেত্রে ঠিকাদার হেলাফেলা করলে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। চুক্তি বাতিল হলে চলমান কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং নতুন করে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ হয়।’

নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম কিশোর বলেন,”টনকির রাস্তার বিষয়ে আমি শুনেছি। ঠিকাদারকে দ্রæত সংশোধন করতে ও অফিসের নির্দেশ মানতে বলে দিয়েছি। মুরাদনগরের উপজেলা প্রকৌশলীকে আমি সৎ ও দক্ষ হিসেবেই জানি। ভাল কাজ আদায়ের জন্য তার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিছু অসাধু ঠিকাদার দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে তাঁর উপর নাখোশ থাকতে পারে।’’