প্রকাশিত,২৫, জুন,২০২৩
মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান,
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
উত্তরাঞ্চলের বড় কোরবানীর হাট জয়পুরহাটের নতুনহাট। পশু আর ক্রেতা বিক্রেতায় জমজমাট তিল ধরনের যেন ঠাঁই নাই। যথারীতি এই হাট দুপুর থেকে বসলেও শনিবার সকাল থেকেই ভিঁড় লক্ষনীয়। কেউ কেউ বলছেন স্মরনকালের বড় হাট বসেছে আজ। হাটের জায়গা ছাড়াও রাস্তা এবং অলিগলি পাড়ার মধ্যেও ঢুকেছে গরু আর ছাগল।
সরেজমিনে দেখাগেছে হাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তারা দুপাশে ভটভটি আর ট্রাকে ভরেগেছে। হাটে ক্রেতা বিক্রেতায় উপছে পড়া ভিঁড় দেখা গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে হাটে মেডিকেল টিম কাজ করছে পশু চিকিৎসার জন্য।
শহরের সবুজ নগরের বাসিন্দা গোলাম মোহাম্মদ বুলবুল জানান, প্রতিবছর তাদের টার্গেট থাকে নতুন হাট থেকে পশু কেনার। তার মতো অনেকেই বলছেন, যেহেতু নতুন হাটে পশুর সরবরাহ বেশি তাই এখান থেকে পশু কেনা সহজ।
আক্কেলপুরের কূষক সোহরাব হোসেন বলেন, নতুন হাটে পশু কেনার পাইকার আর খরিদ্দার বেশি তাই বেচাকেনা ভাল হয় এবং একটু ঘোরাঘুরি করলেই চাহিদা মত গরু পাওয়া যায়।
টুঙ্গী গাজীপুর থেকে আসা সৈকত হোসেন জানান, ভালো দামে কোরবানির গরু কিনতে পেরেছেন।
১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দামের গরু কিনতে পেরে তিনি খুব খুশি।
জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী বাজারের নাজমুল হোসেন জানান, “বাজার ভালো পেয়েছি” ১৫ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনতে পেরেছি।
হাটে গরু বিক্রি করতে আসা জয়পুরহাট শহরের তুহিন বলেন, ছয় মাস গরু লালন পালন করে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন, তিনি গরুর দাম রেখেছেন ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর থেকে গরু বিক্রি করতে আসা হাসান আহমেদ বলেন, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাম করছে, তবে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হলে আমি বিক্রি করব।
ঢাকা থেকে কিনতে আসা গরুর পাইকার মাসুদ রানা বলেন, গত ২০ বছর থেকে এ হাটে গরু কিনতে আসি, নয়টি কিনেছি আরও নয়টি কিনব। তবে দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
ঢাকা শনির আখড়া থেকে আসা মহিলা পাইকার শামসুন্নাহার বলেন, গরু কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি। আমার গরু কিনা এখনও শেষ হয় নাই আমার লোকজন গরু কিনছে, কেনা শেষ হলে আমি বলতে পারব কয়টা গরু কিনেছি।
শুধু জয়পুরহাট নয় পার্শবর্তী নওগাঁ, বগুড়া দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলা থেকে ভটভটি করে গরু আনা হচ্ছে এই হাটে। আর ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, নরসিংদী থেকে পাইকারি ক্রেতারা ট্রাক নিয়ে এসেছেন গরু কিনতে। এখানে দেশি, বিদেশী বলতে ভারতীয় ও দেশে উৎপাদিত শাহী ওয়াল জাতীয় গরু বেশি তবে দেশী ষাঁড় ও বোকনা গরুর চাহিদা বেশি। দামের মধ্যে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা দামের গরু কেনা বেচা হচ্ছে। এদিকে প্রচন্ড রোদের কারনে গরু বিক্রেতারা নাজেহাল।
জয়পুরহাট ডেইরি এসোসিয়েশনের সভাপতি মীম রায়হান জয় জানান, নতুন হাটের ইজারা থেকে প্রচুর ইনকাম হলেও হাটের যথেষ্ঠ অব্যবস্থাপনা রয়েছে। গরু দাঁড় করানোর কোন ব্যবস্থা নেই। অতিরিক্ত গরু আসলে তারজন্য ইজারাদার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অতিরিক্ত গরুর চাপে ক্রেতারা গরু দেখে কিনতে পারছেন না। আবার কিছু উছৃঙ্খল গরু যেগুলো বেশী তেজী তার জন্য আজ হাটে এখন পর্যন্ত চার ক্রেতা আহত হয়েছেন। উপরন্তু চারটি গরু অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়েগেছে।
জয় দাবী করছেন হাট থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় হলেও কোরবানী উপলক্ষে কোন সুষ্ঠ ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তিনি ট্রাকে করে তার ফার্ম থেকে কয়েকটি গরু হাটে এনে আনলোড করতে না পারায় আবার ফেরত নিয়ে গেছেন। তার মতো অনেক চাষীই গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।
একই অভিযোগ অনেক ক্রেতা বিক্রেতারই।
কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকার আসাদুল ইসলাম জানান, গতবছরের তুলনায় এবছর গরুর আমদানি বেশি তবে দাম কিছুটা কম আছে। দেশী জাতীয় ষাঁড়ের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।
হাটের চালান লেখক রমজান মিয়া জানান গরুর উপস্থিতি বেশি হলেও বিক্রি কিছুটা কম। মাঝারি সাইজের পশু বিশেষ করে ষাট থেকে এক লাখ বা দেড় লাখ টাকার গরুর চাহিদা বেশি।
হাট ইজারাদার কালিচরন জানান, এবার ঈদের হাটটা মোটামুটি ভালো, গতবারের চেয়ে কৃষকেরা দাম ভালো পাচ্ছে। দুই তিনটা হাটে গরুর উপস্থিতি বেশি সেই কারনে কেনাবেচায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা সকল দিক খেয়াল রেখে এই হাটটা চালাচ্ছি এবং সরকারি সকল নিয়ম মেনে আমরা হাটের ছাপা আদায় করছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজার রহমান জানান, এবছর জেলায় ৩লাখ ৮হাজার ২শ পশু প্রস্তুত করা আছে এর মধ্যে জেলার চাহিদা রয়েছে ১লাখ ৫০হাজার ২শ। উৎবৃত্ত ১লাখ ৫৮ হাজার পশু জেলার বাইরে চলে যাবে।
মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান
জয়পুরহাট
আপনার মতামত লিখুন :