উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড।


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৩-০৭-১০, ২:৩৪ অপরাহ্ন /
উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড।

প্রকাশিত,১০, জুলাই,২০২৩

মোঃ আতাউর রহমান।
খানসামা দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ

উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডকে নতুন আঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ (সমুন্নত) করতে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশেষ করে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, রেললাইন স্থাপন এবং ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ- বেপজা ও রেল মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে খুব দ্রুত কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক । এই তিন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে প্রাচুর্যপূর্ণ হিসাবে সমৃদ্ধ পথে এগিয়ে যাবে উত্তরা ইপিজেড বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক ।

বর্তমানে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত রয়েছে ৩০ হাজার শ্রমিক। এখন বছরে প্রায় ২৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। বিশেষ করে অতিমারী করোনাকালিনের মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এর রফতানি মূল্য ছিল ২৩৭. ২১ মিলিয়ন ইউ.এস ডলার। এক কালের মঙ্গা কবলিত নীলফামারীর ৩০ হাজার শ্রমিক উত্তরা ইপিজেডের উন্নয়নের আলোয়, উদ্ভোসিত করেছে তাদের জীবন জীবিকাকেও। সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে আরও বেশী বেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নতুন আঙ্গিকে আরও সমৃদ্ধ (সমুন্নত) করা হচেছ এই উত্তরা ইপিজেডকে। এতে আরও ৩০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃস্টি করবে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উত্তরা ইপিজেড স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালের ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলফামারী এসে এই ইপিজেডের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন।

শুরুতে ইপিজেডে হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে চীনারা অর্থ বিনিয়োগ করে। মাঝে সরকার পরিবর্তন ঘটলে এই ইপিজেডে অন্ধকার নেমে আসে।একটি মহল উত্তরা ইডিজেডকে বন্ধ করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। কিন্তু কালের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সরকার ২০০৮ সালে পুনরায় দেশের সরকার গঠন করলে ধীরে ধীরে উত্তরা ইডিজেড প্রাণ পেতে থাকে । নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ১৯০ টি প্লট রয়েছে। এখানে ২৯টি দেশী-বিদেশী কোম্পানী কাজ করছে। ৪০টি প্লট এখনো ফাঁকা আছে। সকল সুযোগ সুবিধা এগিয়ে আসায় ফাঁকা প্লটগুলো আর ফাঁকা পরে থাকবেনা। সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে চলতি ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ইপিজেড থেকে ১৫৫৭.১১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সামগ্রী যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে। সর্বগ্রাসী করোনামারীর মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এর রফতানি মূল্য ছিল ২৩৭. ২১ মিলিয়ন ইউ.এস ডলার। এদিকে ইতোমধ্যেই বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে নীলফামারী পর্যন্ত উত্তরা ইউপিহেডে সহ উত্তরাঞ্চলের শিল্প এলাকায় গ্যাস সরবরাহে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উদ্যোগে গৃহীত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল)। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। অপর দিকে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সাথে সরাসরি রেলযোগাযোগ সংযুক্তির লক্ষ্যে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে বসানো হবে রেলপথ ও ইপিজেড সংলগ্ন খয়রাত নগর রেলষ্টেশনে নির্মান করা হবে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি)।এই দুটি কাজ বাস্তবায়িত করবে রেলমন্ত্রনালয়। প্রকল্পের নকশা ইতোমধ্যেই তৈরী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিপূর্নতা এনে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার সুবিধা হাতের কাছে নিয়ে এসে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো নীলফামারীতে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নীলফামারী সদরের খয়রাত নগর রেল স্টেশনে কিছু সরকারী ভূমি রয়েছে।

ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো নির্মানে আরও ভূমি অধিগ্রহন করতে হবে। জেলা প্রশাসক ও রেলসচিব এ বিষয়ে গ্রামবাসীর সাথে ইতোমধ্যে মত বিনিময়ও করেছেন। গ্রামবাসী বলছেন এলাকার উন্নয়নে ভূমি দিতে তারা সকলেই আগ্রহী। নীলফামারীর চেম্বার্স এন্ড কমার্স, এর সভাপতি মারুফ জামান বলেন, উত্তরা ইপিজেডে আসছে পাইপলাইনে গ্যাস। এতে বিভিন্ন শিল্পকারখানার উৎপাদন খরচ কমে আসবে। অপর দিকে রেল সংযোগ ও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপন হলে আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রটি সহজ করে দেবে। উৎপাদন, বিপনন ও পরিবহন সাশ্রয়ী হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সব থেকে আকৃস্ট হবেন। তিনি আরও বলেন,উত্তরা ইপিজেড থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে হলদিবাড়ি দিয়ে রেলপথে ভারত ও ভুটান ও নেপাল পর্যন্ত সরাসরি পণ্য রফতানি যেমন করা যাবে, তেমনি মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে উত্তরা ইপিজেড। সেই সঙ্গে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরকেও সংযুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে রয়েছে বিমানবন্দর। ইপিজেড থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নতিকরনের নির্মান কাজ চলছে এবং ৩৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ। জেলা প্রশাসক আরও জানান উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত রেল প্রকল্পের নকশা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী আমি। তিনি আরও জানান,শিল্পাঞ্চল হিসাবে নীলফামারীকে পরিপূর্নতা দিতে ইপিজেড ছাড়াও, বিসিক এর অধীনে একটি কৃষি শিল্প পার্ক, একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।