প্রকাশিত,০৯, নভেম্বর,২০২৩
মোঃ শিহাব উদ্দিন গোপালগঞ্জঃ
মানবিকতার এমনই আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো গোপালগঞ্জ সদর থানার সুযোগ্য অফিসার ইনচার্জ জনাব মোহাম্মদ আনিচুর রহমান। গত ৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে অর্থাৎ ৯ নভেম্বর রাত্র অনুমান ১২:১৫ ঘটিকার দিকে গাজী রাফসান আসিফ, সুমন মোল্লা এবং তুহিন মোল্লা নামের তিনজন ব্যক্তি ১১/১২ বছরের একটি শিশুকে নিয়ে থানায় আসে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত শিশুটি ঢাকা থেকে বাসে করে গোপালগঞ্জ চলে আসছে। উক্ত তিনজন ব্যক্তিও ঢাকা হতে গোপালগঞ্জ এসে বাসস্ট্যান্ডে শিশুটিকে পেয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে আসেন। এরপর অফিসার ইনচার্জ শিশুটির নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করিলে সে জানায়, তার নাম মোঃ হোসাইন, বয়স-১২ বছর, বাবার নাম- স্বপন মুন্সী। তাদের গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া থানাধীন বর্ণী গ্রামে। কিন্তু শিশু হোসাইন তার বাবা-মা সহ গাজীপুরে বসবাস করে। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। মাদ্রাসার নাম নূর-এ-মদিনা। কিন্তু মাদ্রাসাটি গাজীপুরের কোথায় কিংবা কোন থানা এলাকায় এর কিছুটি বলতে পারে না ছোট্ট হোসাইন। শুধু গাজীপুর আর নূর-এ-মদিনা মাদ্রাসা এই দুটি তথ্যের উপর ভিত্তি করে ছোট্ট হোসাইনের অভিভাবকের সন্ধান শুরু করেন অফিসার ইনচার্জ। গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ প্রথমে ফোন করেন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানায় জানতে চান নূর-এ-মদিনা নামে কোন মাদ্রাসা আছে কিনা? টঙ্গী পূর্ব থানা থেকে জানানো হয় এই নামে কোন মাদ্রাসা ঐ থানা এলাকায় নাই। এরপর টঙ্গী পশ্চিম থানায় ফোন করে জানতে পারেন টঙ্গী পশ্চিম থানায় এই নামের কোন মাদ্রাসা নাই, তবে গাছা থানায় থাকতে পারে। এতটুকু তথ্যই অনেক উপকারে আসতে পারে বলে টঙ্গী পশ্চিম থানাকে ধন্যবাদ দিয়ে অফিসার ইনচার্জ সাথে সাথে ফোন করেন গাছা থানায়। গাছা থানায় ফোন করার পর উক্ত নূর-এ-মদিনা মাদ্রাসার সন্ধান পান। এরপর থানা থেকে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এর নাম্বার সংগ্রহ করেন। প্রিন্সিপালকে ফোন করে অফিসার ইনচার্জ শিশু হোসাইনের নাম এবং বর্ণনা দেওয়ার পর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাহেব হোসাইনকে চিনতে পারেন এবং জানান যে, উক্ত হোসাইন তাঁর মাদ্রাসার ছাত্র। প্রিন্সিপাল সাহেবের নিকট থেকে ছোট্ট হোসাইনের বাবার নাম্বার সংগ্রহ করেন। অফিসার ইনচার্জ হোসাইনের বাবাকে ফোন করে তার ছেলের বর্ণনা বলার পর সাথে সাথে বাবা মোবাইলে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করেন। এই কান্না যেন কষ্টের নয়! আনন্দ কান্না! এরপর শিশু হোসাইন এর বাবার সাথে অফিসার ইনচার্জ ফোনে কথা বলে জানতে পারেন, তাদের গ্রামের বাড়ি বর্ণিতে। তারা স্বপরিবারে গাজীপুরের গাছা থানাধীন হাজীর পুকুরপাড় এলাকায় বসবাস করেন। তার ছেলে হোসাইন হাজীর পুকুর পাড়ের নূর-এ -মদিনা মাদ্রাসার কিতাব খানায় প্রথম জামাতে পড়াশুনা করে। গত ৬ নভেম্বর হোসাইন বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর থেকে তার আর কোন সন্ধান নাই। ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় হোসাইন এর বাবা-মা। এখন অনেকটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস তাদের মাঝে। এরপর হোসাইনের বাবা উরফি গ্রামের তার ভাতিজি ও ভাতিজি জামাইকে ফোন করে থানায় আসতে বলে। হোসাইনের চাচাতো বোন ফারহা সুলতানা মীম এবং চাচাতো বোনের স্বামী- মোঃ এনামুল হক মুন্সী গোপালগঞ্জ সদর সদর থানায় আসার পর হোসাইনকে বাসস্ট্যান্ডে পাওয়া গাজী রাফসান আসিফ, সুমন মোল্লা এবং তুহিন মোল্লা'দের উপস্থিতিতে ছোট্ট শিশু হোসাইনকে তার চাচাতো বোনের জিম্মায় প্রদান করা হয়।