অনিয়ম দুর্নীতিতে জর্জরিত গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ ।


deshsomoy প্রকাশের সময় : ২০২৪-০৬-০৫, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন /
অনিয়ম দুর্নীতিতে জর্জরিত গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ ।

প্রকাশিত, ০৫,জুন, ২০২৪

সঞ্জিব দাস,গলাচিপা, পটুয়াখালী ,প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় রিমাল অতিবাহিত হওয়ার বারোদিন পরও গলাচিপা উপজেলার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গলাচিপা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎতের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেও মেলেনি বিদ্যুৎ সরবারহ।
জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাঁধ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও দেয়া হয়নি। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির কারণে এটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা। বিদ্যালটিতে ২২১ জন ছাত্র-ছাত্রী আর পাঁচ শিক্ষক রয়েছেন।
গত ২৬ মে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় রিমাল আছড়ে পড়ে উপকূলজুড়ে। ঐ দিনই গোটা উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবারহ লাইন ছিঁড়ে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক ও সহকারী শিক্ষিকা জান্নাত চৌধুরী জানান, তীব্র গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না। এর কারণে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুমিন ইসলাম ও সাওদা মনি, দ্বিতীয় শ্রেণির হুমায়রা ও আবির হোসেন, তৃতীয় শ্রেণির বুশরা এবং পঞ্চম শ্রেণির মারিয়াসহ আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াশ ব্লকে পানি ওঠানো যাচ্ছে না, যাতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ঐ স্কুলের এক অভিভাবক নাসির উদ্দিন জানান, টানা ১৬ ঘন্টা ঘূর্ণিঝড়টি স্থায়ী হয়। ঝড়টি থামার সাথে সাথেই বিদ্যালয়ের কাছাকাছি অহিদ গাজী ও নিয়ামত মিয়ার দু’টি বরফকলে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যায়। তাড়া এতো তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ কিভাবে পেল? এর দুইদিন পরে স্কুল পার্শবর্তী বোয়ালিয়া বাজারে বিদ্যুৎ সরবারহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এদিকে উপজেলার পক্ষিয়া গ্রামের রেজাউল মৃধা ও আনছার মৃধা ও চিনারা বেগমের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। মিটার ভেঙ্গে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দুইজনের কাছে ২৪উ টাকা দাবি করেছে বলে জানালেন স্থানীয় তালেব মৃধা।
এছাড়া পানপট্টি ইউনিয়নের তুলারাম গ্রামে ১২টি পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। কলাগাছিয়া গ্রামের এবাদুল হক বাদল, কাছারিকান্দা গ্রামের নিঠুর চন্দ্র পাল, গোলখালী ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামের আলামিন পাহলান বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক করে না দেয়ায় পরিবারগুলো এখনো অন্ধকারে রয়েছে।
এছাড়াও গলাচিপা উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অনেক অভিযোগ। নতুন লাইন সংযোগ ও মিটার পাওয়া অথবা যে কোনো সমস্যার জন্য অফিসে গেলে দেখা যায় সিঁড়ির নিচে টেবিল নিয়ে বসে থাকে ইলেক্ট্রিশিয়ানরা। এ সকল সমস্যার সমাধান ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মাধ্যমে করতে হয়। এই ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মাধ্যমে গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ অর্থ লেনদেন করে থাকে।
এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করতে হয় জনগণকে। ইলেক্ট্রিশিয়ানদের তাদের মোটরসাইকেল সামনে পটুয়াখালী পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জরুরী বিদ্যুৎ স্টিকার লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে দেখা যায়।
এদিকে গলাচিপায় বিদ্যুৎ বিল নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। বিদ্যুৎ বিলের কাগজগুলো বিলের টাকা জমা দেয়ার মেয়াদ শেষ হবার মাত্র এক দুই দিন আগে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়। এতে করে অনেক সময় গ্রাহকদের জরিমানা সহ বিলের টাকা গুণতে হয়।
গলাচিপা পল্লী বিদ্যুৎ ডিজিএম মো: মাইনুদ্দিন মুঠোফোনে অর্থ লেনদেন ও বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে নিউজ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন । ইলেক্ট্রিশিয়াদের মোটরসাইকেলে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টিকারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি জানান, ওরা নিজেরা প্রিন্ট দিয়ে এসব স্টিকার লাগিয়েছে।